Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক মহাসড়কের বেহালদশা

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আর মাত্র দু সপ্তাহ পর ঈদুল আযহা। ঈদ উদযাপন করতে একযোগে লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাবে। ঈদকে সামনে রেখে লাখ লাখ মানুষের নির্বিঘ ঘরে ফেরা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীও মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ করতে নানামুখী প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেন এরপরও ঘরমুখো যাত্রিদের অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঈদুল ফিতরের আগেও সড়ক মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ রাখতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রনালয় ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের তৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়। কোরবানীর ঈদের আগেই সড়ক মহাসড়কগুলোর সংস্কার শেষ হয়ে যাওয়াই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কয়েকদিন আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকেও ১০ দিনের মধ্যে মহাসড়কগুলোর সংস্কার কাজ শেষ করার আশ্বাস দিতে দেখা গেছে অথচ বাস্তব অবস্থা ভিন্নতর। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের উত্তর-দক্ষিণের সব সড়ক মহাসড়কের দশা আগের চেয়েও বেহাল অবস্থায় পড়েছে বলে জানা যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা পানির তোড়ে আরো অনেক রাস্তা ও বেড়িবাধ ভেঙ্গে গেছে। এরই মধ্যে সারাদেশে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার অশনি সঙ্কেত দেখা যাচ্ছে। প্রথম দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠাই যখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন দ্বিতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
অতিবৃষ্টি ও বন্যার দুর্ভোগের পাশাপাশি সড়ক মহাসড়কের বেহালদশা, খানাখন্দ, যানজট এবারো কোটি মানুষের ঈদযাত্রা ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ঈদের প্রায় একমাস আগেই ১০ দিনের মধ্যে সব মহাসড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করার আশ্বাস দিলেও তার বাস্তব প্রতিফলন এখনো দেখা যাচ্ছেনা। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকার নিকটবর্তী শিল্পাঞ্চলীয় শহর গাজিপুরের অধিকাংশ রাস্তা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এক অংশে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরী হওয়ায় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষত: গাজিপুর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইনগুলো দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে লোকজনের চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা এবং বার বার পদ থেকে বরখাস্তের কারণে নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সরকার যখন রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চেয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ডকেই প্রাধান্য দেয়ার কথা বলছেন, তখন শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে মামলা দিয়ে বাধাগ্রস্ত করে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার এলাকায় জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার নেতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে ঢাকা শহরের দুরবস্থা আমরা দেখেছি। রাজধানীর বাস্তবতা থেকেই সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা বোঝা যাচ্ছে। ভাঙ্গা চোরা ও ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার কারণে গত কিছুৃদিন ধরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে যানজট দীর্ঘতর হয়েছে। পাঁচ ঘন্টার পথ যাতায়াতে এখন ১০-১২ ঘন্টা সময় লাগছে। একই অবস্থা আরো বেশ কয়েকটি মহাসড়কে। গত ঈদের আগে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে মেরামতের কাজ তেমন কোন কাজে আসেনি। রাস্তা সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকার অপচয়ের পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু নয়। এমনিতেই আমাদের দেশে রাস্তা নির্মানের খরচ বিশ্বের যে কোন উন্নত রাষ্ট্রের চেয়েও বেশী। প্রতিবেশী দেশের চেয়ে ১০গুণ বেশী খরচে আমরা সবচে নিকৃষ্ট মানের রাস্তা বানাচ্ছি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে। রাস্তা নির্মান ও সংস্কারে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কখনো কখনো মামলাসহ বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও দেখা গেছে। তবে এসব ব্যবস্থা ‘গুরু পাপে লঘুদন্ড’ হওয়ায় অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছেনা। দেশের জনগনের টাকায় রাস্তা, বেড়িবাঁধ, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মান ও সংস্কারে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও সড়ক মহাসড়কে জনগনের যাতায়াত নির্বিঘœ করা যাচ্ছেনা। আমরা আশা করব বষার্য় ও ঈদের আগে তড়িগড়ি রাস্তা মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকার লুটপাট ও অপচয় বন্ধ হোক। ঈদের আগে সড়ক মহাসড়ক সংস্কারের প্রকল্পগুলো যথাযথ মান এবং সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে কার্যকর মনিটরিং ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন