Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অপরাধে নেমেই ভয়ঙ্কর ৭ দিনের মাথায় ২ খুন!

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : মো: জাহেদুল হক সুমন (২৬)। পেশায় অটোরিকশা চালক। অপরাধজগতে নেমেই হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঠান্ডা মাথায় দুটি খুন করে সে। নগরীর বাকলিয়ায় আবদুল জলিল এবং সাতকানিয়ায় আবুল বশরকে নির্মমভাবে খুন করে সুমন ও তার সহযোগীরা। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর আদালতে খুন দায় স্বীকার করেছে সুমন। ওই দুই খুনের বর্ণনাও দিয়েছে এই ভয়ঙ্কর অপরাধী। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন সুমনের তথ্য অনুযায়ী স্ত্রীর চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে অপরাধে পা বাড়ায় সে। তবে অপরাধে নেমেই ভয়ানক হয়ে উঠার ঘটনা নজিরবিহীন।
গত ২ আগস্ট নগরীর বাকলিয়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে খুন করা হয় চালক আবদুল জলিলকে। এরপর ৮ আগস্ট সাতকানিয়ায় খুন করা হয় অপর রিকশা চালক আবুল বশরকে। বশর খুনের ঘটনায় সহযোগী বেলাল হোসেনসহ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার বাকলিয়ায় রিকশা চালককে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সুমন। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি। আদালতে সুমন বলেন, তিনি পেশায় রিকশা চালক। তাদের গ্রামের বাড়ি দোহাজারির চাপাচরে। তার পিতার নাম মো: ইদ্রিস। স্ত্রী তাজনূর বেগমকে নিয়ে নগরীর বন্দর থানার ১নং মাইলের মাথায় একটি কলোনীতে ভাড়া বাসায় থাকেন। সংসার ভালই চলছিল। হঠাৎ স্ত্রীর বড় অসুখ ধরা পড়ে। তার পেটে টিউমার হয়। চিকিৎসক বলেছেন অপারেশন করতে হবে। অনেক টাকাও খরচ হবে।
সুমন বলেন, শুনে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখি। বিপদের কথা জানিয়ে বন্ধু ও মামাত ভায়রা বেলালের সাহায্য চাই। সে বলে আমাদের সাথে নেমে পড়, কাজ দেব। এরপর বেলাল জাকির ও সালাউদ্দিন নামে আরও দুইজনের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর ২ আগস্ট রাতে তাকে বেলাল ও অন্যরা এসে তার বাসা থেকে তুলে নেয়। তারা জানায় বাকলিয়ায় একটি কাজ আছে। কি কাজ জানতে চাইলে বেলাল জানায়, একটি ব্যাটারি রিকশা চালিয়ে আনবি, ২ হাজার টাকা পাবি। সুমন জানায়, এরপর সে তাদের সাথে চলে যায়। গভীর রাতে একটি ব্যাটারি রিকশা ভাড়া করে তারা। রিকশাটি নিরিবিলি এলাকায় পৌঁছলে চালকের উপর হামলে পড়ে তারা। এরপর তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে লাশ রাস্তায় ফেলে দেয়। তবে লোকজন চলে আসায় রিকশাটি ছিনতাই না করে তারা পালিয়ে যায়। সুমন জানায়, এ সময় সে রিকশা চালকের মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসে। পরে সেটি রেয়াজুদ্দিন বাজারে ২শ’ টাকায় বিক্রি করে।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ২ আগস্ট রাতে বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকায় চালক জলিলকে ছুরি মেরে হত্যা করে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে তারা। ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর ওই রিকশা চালকের লাশ ঘটনাস্থলের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রিকশা চালকের বড় ভাই মো. কায়সার বাদী হয়ে একটি মামলা করলে জড়িতদের ধরতে পুলিশের একটি দল মাঠে নামে। সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর বলেন, গত ৮ আগস্ট ভোরে সাতকানিয়ায় চালককে খুন করে রিকশা নিয়ে পালানোর সময় দুজনকে গ্রেফতার করে চন্দনাইশ থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও একজনের জড়িত থাকার কথা জানায়। চন্দনাইশে গ্রেফতার দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাতে বন্দর থানার মাইলের মাথা এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। সাতকানিয়ায় চালক খুন করে অটো রিকশা ছিনতাইয়ের পাশাপাশি রাহাত্তার পুল এলাকার ঘটনায়ও জড়িত থাকার কথা সুমন জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর জানান, সুমন জানায়, সাতকানিয়ায় গ্রেফতার বেলাল তার আত্মীয়। স্ত্রীর অসুখের কারণে আর্থিক সংকটে পড়ায় সে বেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বেলালের মাধ্যমে পরিচয় সালাউদ্দিন ও জাকিরের সঙ্গে। পুলিশ জানায়, সুমন সাতকানিয়ায় খুনের ঘটনায়ও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ওই ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ৮ আগস্ট চন্দনাইশের দেওয়ানহাট থেকে রিকশা ভাড়া করে তারা। এরপর নির্জন স্থানে গিয়ে চালক বশিরকে গাছের সাথে বেঁধে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ