Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুন্দরবন ও উপকূলভাগের স্বার্থে নদীটিকে বাঁচাতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সচিত্র খবরে বলা হয়েছে, সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলভাগে মিঠা পানির একমাত্র আধার গড়াই নদীর উৎসমুখে বিশাল বালুরাশি জমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নভেম্বরের পর থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ হবার জন্য অপরিকল্পিত ড্রেজিংকে দায়ী করেছেন পানি বিশেষজ্ঞসহ নদীপাড়ের মানুষ। বলা হয়েছে, সারা বছর নদীর নাব্য ধরে রাখতে এর উৎসমুখ কুষ্টিয়া অঞ্চলে নদী খননে ৫৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হলেও শুষ্ক মৌসুমেই বন্ধ হয়ে গেছে নদীর শ্রোত ধারা। দেড়যুগ আগেই পলি ও বিপুল বালু জমে গড়াই নদীতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে সরকার তৎকালীন এ নদী পুনরুদ্ধারে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। নেদারল্যান্ডের জিআরসি কোম্পানির মাধ্যমে এ কাজ শুরু হলে এলাকাবাসীর মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল। তবে মেয়াদ শেষ হবার কিছুদিন পর দেখা গেল নদীর যে সমস্যা সমাধানে জন্য এত টাকা খরচ করা হয়েছে তার কোন সমাধান হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানির স্তর নেমে যাওয়ায় উৎসমুখে বিশাল বালুরাশি জমে গড়াই নদী একবাবে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। পায়ে হেঁটে মানুষ নদী পার হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের নদী এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের উপর। বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছে, খননে পর যদি তিনমাস পানিই না থাকে তাহলে খুঁড়ে লাভ কি? এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও খনন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে, অথচ নদীতে পানি থাকছে না। যত টাকা নদীতে ঢালা হয়েছে সব বিফলে গেছে। তারা বলছেন, খনন করে বালু নদী তীরে রাখছে আর বৃষ্টিতে সেই বালু নদীতেই পড়ছে।
পরিবেশ গত দিক থেকে পদ্মার প্রধান শাখা নদী গড়াইকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। পৃথিবী খ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলে মিঠা পানি সরবরাহ করে লবণাক্ততা কমাতে বড় ভূমিকা রাখে এই নদী। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকার পদ্মায় এ নদীর উৎসমুখ। বলা হচ্ছে, গড়াই নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা, এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করা, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবমুক্ত রাখা, সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্তা দূরীকরণ, দক্ষিণাঞ্চলের মিষ্টি পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি, সেচ সহযোগিতা প্রদান, মৎস্য চাষ সুবিধা, সুন্দরবনের বৃক্ষরাজির উৎপাদন বৃদ্ধি, কুষ্টিয়া যশোরে, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর, যশোর খুলনা এলাকাকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষাসহ আরো বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নিয়ে গড়াই পুনরুদ্ধার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪২ কোটি টাকা। এখন দেখা যাচ্ছে, এ প্রকল্প কোনো কাজে আসছে না। পানির টাকা পানিতেই ভেসে গেছে। প্রকাশিত রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে বলা যায় যথাযথ, দেখভালের অভাবেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটি দুর্নীতি ও লুপাটের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয় নদী ড্রেজিং নিয়ে লুটপাটের খবর নতুন কিছু নয়। ড্রেজিং থেকে বাস্তবে কোন সুফল পাওয়া গেছে এমন খবর খুব কমই দেখা গেছে। যদিও নদী রক্ষার বাস্তবতাতেই দেশের বিশিষ্টজন এবং বিশেষজ্ঞরা ড্রেজিং ও কূল রক্ষার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে এব্যাপারে মন্ত্রী পরিষদে সিদ্ধান্তও হয়েছিল। বাস্তবে এর কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। একদিকে নদ-নদীও শুষ্ক থাকছে অন্যদিকে টাকাও লোপাট হচ্ছে। বলাবাহুল্য, প্রতিবেশির বৈরি পানি নীতির কারণেই বাংলাদেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার বৈরি পানিনীতির কারণে দেশে নৌপথ কমে ২৪ হাজার কিলোমিটার থেকে এখনমাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতারই শিকার হচ্ছে আমাদের নদ-নদী, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।
এ কথা নতুন করে বলার কোন প্রয়োজন নেই যে, নদ-নদী না বাঁচলে প্রকৃতি, কৃষি, কোন কিছুই বাঁচবে না। গড়াই নদী শুকিয়ে যাবার মূল কারণ মূল নদী পদ্মায় পানি না থাকা। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মাই এখন পানি শূন্য। কার্যত অমাদের নদ-নদী রক্ষায় যে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রয়োজন বর্তমান সময়ে তা বলতে গেলে অনুপস্থিত। এক তরফাভাবে আমরা ক্রমাগত ভারতীয় স্বার্থরক্ষা করে গেলেও তার বিনিময়ে আমাদের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকুও মেটাতে পারছি না। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয় পানিটুকু আনতে না পারার পাশাপাশি নদ-নদী খনন নিয়ে দুর্নীতি দুর্বৃৃত্তায়ন বাংলাদেশ পানিশূন্যতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে মিঠা পানি সরবরাহের যোগানদাতা গড়াইয়ের মৃত্যুদশা সেখানখার জীবন যাপনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে সেটা প্রমাণিত হয় সেখানকার স্থানীয় সরকারী দলের নেতাদের বক্তব্যেই। দেশের নদ-নদীর নাব্য রক্ষায় ড্রেজিং, গঙ্গাবাঁধ ও কার্যকর নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক ফোরামে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতকরণে যথোপযুক্ত উদ্যোগ নেয়াও জরুরি। সামগ্রীক বিবেচনায় এটা বলা দরকার সুন্দরবন ও উপকূলীয় প্রাকৃতিক বেশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় গড়াই বাঁচাবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুন্দরবন ও উপকূলভাগের স্বার্থে নদীটিকে বাঁচাতে হবে
আরও পড়ুন