Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বর্ন্যাতদের পাশে দাঁড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর, জটিল ও প্রাণঘাতি আকার ধারন করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে বন্যা দুর্গত এলাকার পরিধি। উজান থেকে আসা ঢলে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, ধরলা, সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে আরো উর্ধ্বমুখী ও কুলপ্লাবি হয়ে উঠায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, গত তিনদিনে বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যমুনা নদীর পানি ইতিমধ্যেই ১৯৮৮ সালের মহাপ্লাবনের সীমা অতিক্রম করেছে যা ২০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সীমা বলে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কিকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত তথ্যে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। লক্ষ্যনীয়, গত প্রায় দুইমাসে দেশের নদনদীগুলোর পানিবৃদ্ধি ও বন্যা পরিস্থিতির আস্তে আস্তে অবনতি ঘটেছে। মাসাধিককাল ধরে বন্যাদুর্গত এলাকার লাখ লাখ মানুষ অবর্ননীয় দুর্ভোগে পতিত হয়ে ত্রানের জন্য হাহাকার করলেও সরকারের ত্রাণ তৎপরতার চিত্র অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। এমনকি বেসরকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক ত্রাণ তৎপরতাও তেমন দেখা যাচ্ছেনা। দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকার কয়েক কোটি মানুষকে ভয়াবহ বন্যায় দুর্গত অবস্থায় রেখে দেশে অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় ও বিতর্ক অতিরাজনীতি চলছে। বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার, আশ্রয় ও ত্রান সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর মানবিক বা প্রশাসনিক দায় যেন কারোই নেই।
সবগুলো প্রধান নদনদীতে অস্বাভাবিক দ্রæততায় পানি বাড়ছে। এপ্রিল মাসে আকষ্মিক বন্যায় হাওরের ধান এবং মাছের মড়কের মধ্য দিয়ে যে বন্যা পরিস্থিতির শুরু হয়েছিল, গত তিনমাসে ধীরে ধীরে তা দেশের উত্তর-পশ্চিমে ক্রমশ: বিস্তৃত হয়ে এখন তা প্রলয়ঙ্করী রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইতিমধ্যেই লাখ লাখ একর জমির ধান, সব্জিসহ নানা ধরনের ফসল ও বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ন্যাত জেলাগুলোর লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন, কর্মহীন, খাদ্য ও সহায়সম্বলহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে ন্যুনতম ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ ও ত্রাণের জন্য হাহাকার সম্পর্কে প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও সরকারের ত্রান তৎপরতা খুবই অপ্রতুল। তিনদিনের বন্যায় অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর থেকেই বোঝা যায় বন্যা কতটা মারাত্মক হয়ে উঠেছে। বাণের পানিতে বেড়িবাঁধ, বাড়িঘর ও নদীতীরের ভিটেমাটি বিলীন হয়ে যাওয়ার শোকে মুহ্যমান মানুষগুলো খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে কাতরাচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে এবং আশ্রয় কেন্দ্রের সুযোগ- বঞ্চিতরা ঘরের ভেতরে মাচার উপর, কলার ভেলা, নৌকা বা বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। বিপন্ন পরিবারগুলো তাদের শিশু, বয়ো:বৃদ্ধ ও অসুস্থ্য মানুষগুলো নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে। এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা আগামী নির্বাচনের ছক আঁকছেন, সুপ্রীম কোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে বক্তৃতাবাজিতে লিপ্ত থাকলেও বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তাদের নিস্ক্রিয়তা ও অনীহা বিষ্ময়কর।
বন্যা পরিস্থিতির শুরুতেই বড় ধরনের ফসলহানির সাথে সাথে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সরকারের খাদ্য গুদামে অপর্যাপ্ত চালের মজুদ প্রসঙ্গ। তড়িঘড়ি খাদ্য আমদানী ও খাদ্যের মজুদ বাড়াতে চাল আমদানীর শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হলেও বাজারে চালের মূল্য কমেনি। বেশীরভাগ বন্যার্ত, কর্মহীন মানুষের পক্ষে উচ্চমূল্যে চাল-ডাল কিনে পরিবারের ভরণ-পোষন করা প্রায় অসম্ভব। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গৃহপালিত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়ে চরম বিপদে আছে তারা। বন্যার্ত মানুষের ত্রাণের জন্য নগদ অর্থ, চাল-ডাল, আটা, বিশুদ্ধ পানি, শিশুখাদ্য, ওষুধ-পথ্য ও পশুখাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হবে। এখনো পানি বেড়ে চলেছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও বাড়তে থাকবে। বন্যার্ত মানুষের ন্যুনতম মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর টিম ত্রান তৎপরতায় নেমেছে বলে জানা যায়। এটি একটি আশাব্যঞ্জক খবর। সেনাবাহিনীর ত্রান তৎপরতার পরিধি আরো বাড়াতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নদী-ভাঙ্গন, নানা রোগ-ব্যাধির প্রার্দুভাব, ভেঙ্গে ও ভেসে যাওয়া ঘরবাড়ি মেরামত ও পুর্নবাসনের পরিকল্পনাও আগেই নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা এবং রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদেরও বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার দলের নেতা-কর্মীদের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে সরকারী দলের এমপি-মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীদের নিজস্ব উদ্যোগে বন্যার্ত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। বন্যায় ইতিমধ্যেই লাখো কৃষক সবর্স্ব হারিয়েছে। লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানী করে সাময়িকভাবে খাদ্য ঘাটতি পুরণ করা সম্ভব হলেও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুরনে বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, বেড়িবাঁধ নির্মান ও পানিবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রæততম সময়ে বিনা সুদে ও সহজশর্তে কৃষিঋণের ব্যবস্থা করে আগামীতে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বর্ন্যাত
আরও পড়ুন