Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মোটেও কমেনি ভবদহের ভয়াবহতা এক মাস চলছে পানির সঙ্গে লড়াই

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

‘আমরা কি পানিবন্দি থেকে রক্ষা পাবো না, আর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না, এভাবে বেঁচে থাকা যায় না’-কথাগুলো পানিবন্দিদের। পানির সাথে লড়াই চলছে প্রায় একমাস ধরে পানিবন্দিদের। এই চিত্র মানবসৃষ্ট দুর্যোগ যশোরের অর্থ লোপাটের কারখানা হিসেবে চিহ্নিত ভবদহ এলাকার।
পানি সামান্য কমলেও শতাধিক গ্রামের মানুষের দুর্গতি মোটেও কমেনি। ভবদহের কারণে ৩টি উপজেলা কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগরের ১শ’৩০টি গ্রাম এবারের বর্ষণে প্লাবিত হয়। বাড়িঘর, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, দোকান পাটে পানি থৈ থৈ করছে। রাস্তায় আশ্রয় নেয়া মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। খেটে খাওয়া মানুষের কাজ নেই, নেই পর্যাপ্ত ত্রাণ সুবিধা। পানিবন্দিদের কথা, ‘আমরা টানা প্রায় একমাস পানির সঙ্গে লড়াই করছি, কেউ আমাদের দেখার মতো দেখলো না।
রান্নার জায়গা নেই, নেই কবর দেওয়ার জায়গা। এভাবে আর কতদিন আমাদের থাকতে হবে জানি না। এতো কষ্ট আর সহ্য হয় না। ত্রাণ সাহায্য একেবারেই অপ্রতুল। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা ত্রাণ সাহায্য চাই না, সরকারের টাকা লুটপাট করে যারা আমাদের পানিবন্দি করেছে, তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করা হোক। বছরের পর বছর ধরে ভবদহে শুধু লুটপাট হবে, কাজ হবে না এটা হতে পারে না।’ যশোর-চুকনগর সড়কের চিনাটোলা এলাকায় রাস্তার টংঘরে আশ্রয় নেয়া বৃদ্ধ আব্দুল জলিল। বললেন, বাড়িতে কোমর পানি। বাড়ি ফিরতে পারছি না। সাহায্যও পাচ্ছি না। মাছ দরে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে আছি। মাছেমধ্যে লোকজন এসে এক টুপলা চিড়া মুড়ি দিয়ে যায়। তার কথা ত্রাণ সাহায্য একেবারেই অপ্রতুল। পানিবন্দিদের কথা, পানি উন্নয়ন বোর্ড আর প্রভাবশালী ঠিকাদাররা সবসময় সরকারী টাকা লুটপাট করে। কাজ করে না। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়ি। এবারও শুনছি ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ হচ্ছে। সবসময় পানিবন্দিদের দুর্দশার স্থায়ীভাবে লাঘবের কথা বলে সরকারী বরাদ্দ নিয়ে লুটপাট করা হয়। আমরা স্থায়ীভাবে কখনোই সমস্যার সমাধান পাচ্ছি না। আমরা এর থেকে নিস্কৃতি চাই। লুটপাটের প্রতিবাদ করি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ত্র্ণা সাহায্য দেওয়া হয়েছে ১শ’১০ মেট্রিক টন চাল। নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে একলাখ টাকা। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু ত্রাণ সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। রেড ক্রিসেন্ট সাহায্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ভবদহ এলাকায় একদিকে ভারী বর্ষণ অন্যদিকে সময়মতো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, সর্বশেষ ভবদহের বরাদ্দকৃত ৯৯ লাখ টাকার খনন এবং বিল কপালিয়ায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু করা হওয়ায় মূলত ভবদহের অবস্থা এবার এতটা ভয়াবহ হয়েছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, ভবদহের পানিবন্দীদের রক্ষা ও মানবিক বিপর্যয়রোধে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। তিনি বলেন, এখনো মানুষ পানির মধ্যে বসবাস করছেন। মানুষের দুর্ভোগ কমেনি মোটেও। পানি নীল বর্ণ ধারণ করছে। পানি দূষিত হয়ে পড়ায় ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ