Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুপ্রিম কোর্ট ন্যায়বিচারের রশ্মি দিয়ে বিপজ্জনক স্থানগুলো আলোকিত করে

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়-১২

প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০১ এএম, ১৯ আগস্ট, ২০১৭

ইনকিলাব ডেস্ক : সংবিধানের আলোকবর্তিকা হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট ভারসাম্যের চক্র। একটি বাতিঘর । এটি এর মঙ্গলময় স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের রশ্মি দিয়ে বিপজ্জনক স্থানগুলো আলোকিত করে তোলে।
আমি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বিধানাবলী, ২০১৩ সালের ০৬ ও ০৭ আইন, ৮১টি আইন অনুমোদন সংক্রান্ত আইনসমূহ সম্পর্কে বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতির তথ্য ও পর্যবেক্ষণে একমত হতে পারছি না। কেননা ঐ সব আইন এই আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় নি এবং সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ দেয়া হয় নি এবং এ ব্যাপারে কোন আর্জি (ংঁনসরংংরড়হ) পেশ করা হয় নি।
সবশেষে আমি বেøইজ পাসক্যালের একটি উদ্ধৃতি দিতে চাই। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাহীন ন্যায়বিচার অকার্যকর; ন্যায়বিচারহীন ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারিতা। ন্যায়বিচারহীন ক্ষমতার বিরুদ্ধে অতি দ্রæত প্রশ্ন তোলা হয়। সুতরাং ন্যায়বিচার ও ক্ষমতাকে অব্যশই একত্রিত করতে হবে, যাতে করে যা ন্যায় তা-ই শক্তিশালী এবং যা শক্তিশালী তা-ই ন্যয় হতে পারে।
উপরের এই পর্যবেক্ষণ থেকে এই আপিল খারিজ করা হলো।
বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার
বিচারপতি ঃ মাই লর্ড, বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতি এবং আমার সতীর্থ অন্য ভাইদের প্রস্তাবিত রায় আমি পড়েছি। এই পর্যবেক্ষণ এবং হাইকোর্ট বিভাগের সংখ্যা গরিষ্ঠ রায়েকৃৃত পর্যবেক্ষণের কিছু কিছু অংশ বাদ দেয়াসহ এই আপিল নাকচ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ একমত। তবে বিষয়টির ব্যাপারে আমি আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার সুযোগ নিতে চাই। এই আপিলে প্রশ্ন উঠেছে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে আনা ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪ সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতিমালা, আইনের শাসন ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতার বিরোধী হওয়ায় তা সংবিধানের পরিপন্থী কি না। ক্ষমতা পৃথকীকরণ, আইনের শাসন ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িত থাকায় আপিলের বিষয়টিকে ব্যাপকভিত্তিতে দেখতে হবে। এই বিষয়টি বিবেচনার লক্ষ্যে ষোড়শ সংশোধনীতে যেমন করা হয়েছে শুধু তেমন অপসারণ প্রক্রিয়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি যে পর্যন্ত বিবেচ্য সে পর্যন্ত সিদ্ধান্তের বিষয় হবে কি না সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন কিংবা বিচারক নিয়োগ, তাদের চাকরির মেয়াদের নিশ্চয়তা, উচ্চতর বিচার বিভাগে বিচারকদের বেতন-ভাতা বিবেচনায় আনতে হবে। আমার মতে নিয়োগ, মেয়াদ ও বেতন-ভাতার নিরাপত্তা এবং অপসারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য তিনটি মৌলিক চাহিদা। আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো আইনের শাসনের মৌলিক চাহিদা যা বিচার কার্যের অবাধ ও সুষ্ঠু নিষ্পত্তিতে বিচারকের জন্য প্রয়োজন। মাই লর্ড, বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিজ্ঞ ভ্রাতৃবৃন্দ ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে করা অপসারণ প্রক্রিয়ার ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবিত বিতর্কে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। এ বিষয়ে এবং বিচারকদের চাকরির মেয়াদ ও বেতন-ভাতার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই আদালতের অন্য আরও কয়েকটি রায়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। তবে সংবিধান সুরক্ষার লক্ষ্য এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো যথা গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ক্ষমতা পৃথকীকরণ ইত্যাদি সমুন্নত রাখতে যথাযথ সতর্কতার সাথে এবং সংবিধানের বিধানবলী অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া না হলে যে বিচারকরা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে স্বাধীন হতে পারেন না সে ব্যাপারে যৌক্তিকতা প্রদর্শনের লক্ষ্যে উচ্চতর আদালতে বিচারকদের নিয়োগের প্রশ্নে আমি একটা অভিমত দিতে চাই যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অন্যতম মৌলিক চাহিদা। আমাদের স্বাধীনতার একটা সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যে শিকার হয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) জনগণের উন্নয়ন ও অধিকারের প্রতি শাসকরা কখনওই মনোযোগী ছিল না। বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অসাম্যের বেদনা জনগণকে হতাশ করে তোলে। শাসকদের বিরুদ্ধে শুরু হয় সংগ্রাম। এই হতাশার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা আন্দোলেনের মাধ্যমে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের এই অংশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগনের ভাষা ‘বাংলা’-কে উপেক্ষা করে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেয়া হয়। মাতৃভাষার জন্য এ দেশের সন্তানরা তাদের জীবন উৎসর্গ করে। এরপর আবারও পাকিস্তানী শাসকরা নির্যাতন শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালায় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন। শান্তিপ্রিয় বাঙালিরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। ২৬ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর উপমহাদেশের এ অংশের মানুষ তাদের দেশকে মুক্ত করে এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যূদয় ঘটে। এর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম ঈড়হংঃরঃঁবহঃ অংংবসনষু নতুন মুক্ত হওয়া দেশের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করে। বিস্ময়কর কার্য সম্পাদনের পর সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান তৈরি করে। এটি ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর ঈড়হংঃরঃঁবহঃ অংংবসনষু-তে পাস হয়। এতে শহীদদের চরম আত্মত্যাগের কথা এবং শোষণমুক্ত একটি দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অর্জনের কথা স্বীকার করে নেয়া হয়, যেখানে থাকবে আইনের শাসন এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা; থাকবে রাজনৈিিতক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য ও ন্যয়বিচারের নিরাপত্তা।



 

Show all comments
  • শাফায়েত ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১:১৭ পিএম says : 0
    এই ধরনের ভালো বিষয়গুলো দৈনিক ইনকিলাবে পাওয়া যায়, তাই শুরু থেকেই দৈনিক ইনকিলাবের সাথে আছি।
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১:২৪ পিএম says : 0
    একদম ঠিক কথা
    Total Reply(0) Reply
  • জার্জিস ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১:২৬ পিএম says : 0
    এই রায়ের মাধ্যমে এদেশের জনগণ আশার আলো দেখছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুপ্রিম কোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ