Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সেই শিশু ফাতেমার নামে ৫ লাখ টাকার এফডিআর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৭, ৫:১৫ পিএম

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া দশ মাসের শিশু ফাতেমার নামে করা ৫ লাখ টাকার এফডিআর আদালতে জমা দিয়েছেন আইনজীবী সেলিনা আক্তার দম্পতি। একই সঙ্গে ওই নাবালক শিশুর শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালনকালে সার্বিক কল্যাণ করবেন মর্মে হলফনামাও আদালতে জমা দিয়েছেন ওই দম্পতি।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার শিশু আদালতে তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই সকল ডকুমেন্ট জমা দেন।
ওই আদালতে এদিন দুপুরে বিচারক (অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) মো. হাফিজুর রহমান এ সংক্রান্তে শুনানির পর শিশুটিকে ওই দম্পতির কাছে তুলে দেওয়ার চূড়ান্ত আদেশ দিবেন।

এ সম্পর্কে আইনজীবী সেলিনা আক্তার (৪৮) জানান, এক্সিম ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখায় তারা শিশুটির নামে ওই এফডিআর করেছেন। যার ডকুমেন্ট তারা আদালতে হফলনামার সঙ্গে জমা দিয়েছেন। এখন শিশুটিকে তাদের হেফাজতে পাওয়ার আপেক্ষায় আছেন।

আদালতে জমা দেওয়া হলফ নামায় তারা উল্লেখ করেছেন যে, গত ২৫ জুলাই তারা শিশু ফাতেমার বৈধ অভিভাকত্বের জন্য আদালতে আবেদন করেন। গত ১৬ আগস্ট আদালত শিশু ফাতেমাকে তাদের জিম্মায় প্রদানের আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মতে তারা শিশু ফাতেমার নামে এক্সিম ব্যাংকে ৫ লাখ টাকার এফডিআর করেছেন। তারা শিশু ফাতেমাকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ফলোয়াপের জন্য প্রতি ৬ মাস পরপর আদালতে সামনে উপস্থিত করবেন। এছাড়া তারা শিশু ফাতেমার শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালনকালে তার সার্বিক কল্যাণ করবেন।

ওই আইনজীবী আইনজীবী সেলিনা আক্তার ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সিনিয়র ‘ল’ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্বামী মো. আলমগীর হোসেন একজন ব্যবসায়ী। দশ বছর বিবাহিত জীবনে ওই দম্পতি নিঃসন্তান।

এর আগে আদালতে ৯ জন নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটির হেফাজত পাওয়ার জন্য ওই আদালতে আবেদন করেন। গত ১৬ আগস্ট বিচারক ওই সকল দম্পতির বক্তব্য পৃথকভাবে খাসকামরায় বসে শ্রবন করেন। এরপর আদেশ প্রদান করেন। আদেশ প্রদানের আগে বিচারক বলেন, যারা আবেদন করেছেন তারা সভাই শিশুটিকে হেফাজতে পাওয়ার যোগ্য। অনেক দম্পতি শিশুটির নামে বাড়ি-গাড়ি পর্যন্ত লিখে দিতে চেয়েছেন। তবে আদালত শুধু অর্থ সম্পদ বিবেচনা আদেশ দিচ্ছে না। শিশুটির সার্বিক মঙ্গল বিবেচনায় নিয়ে আদেশ দিচ্ছেন। আর ভবিষ্যতে যদি শিশুটির পিতা-মাতা পাওয়া যায় এবং তারা দাবী করেন তাদের হাতে তখন শিশুটিকে তুলে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরছিলেন জামালপুরের শম্পা। বিমানে তার সঙ্গে এক নারীর পরিচয় হয়। ওই নারীর কোলে শিশুটি ছিল। শম্পা জর্ডানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানতে পারেন অজ্ঞাত নারীও একই কাজে সেখানে গিয়েছিলেন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই বিমান বিজি ০৮৫ ফ্লাইট অবতরণের পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাস্টমস থেকে মালপত্র নিয়ে বের হতে শুরু করেন যাত্রীরা। বিমানবন্দরের ক্যানওপি পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওই ফ্লাইটের যাত্রী শম্পা।

এ সময় বিমানে পরিচয় হওয়া ওই নারী তার কাছে ছুটে আসেন। অনুরোধ জানিয়ে বলেন- 'আপা আমার শিশুটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি।' আগে কথা হওয়ায় সরল বিশ্বাসে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন শম্পা। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও সেই নারী আর ফেরেননি। দুই-তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে স্বপ্না তার বাসায় শিশুটিকে নিয়ে যান।

পরের দিন বিকাল ৩টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে বিমানবন্দরের এপিবিএন পুলিশের কাছে আসেন। পরে এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানায় জিডি করা হয় (জিডি নং ৪০৪)। পরবর্তী সময়ে শিশুটিকে রাজধানীর তেজগাঁও এ পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পাঠানো হয়। বর্তমানে শিশুটি সেখানেই রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ