Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনাথের মন্তব্য নাকচ করেছে বেইজিং চীন-ভারতের সম্পর্কে গভীর ফাটল সৃষ্টি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দোকলামে অচলাবস্থা নিরসনে বেইজিং ইতিবাচক উদ্যোগ নেবে বলে তিনি আশা করেছিলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর এ মন্তব্য চীন নাকচ করেছে এবং আরো আগ্রাসী মনোভাব ব্যক্ত করেছে। গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা বলেছে, দোকলাম সংকট চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে গভীর ফাটল সৃষ্টি করেছে। খবর দি টাইমস অব ইন্ডিয়া, দি গ্লোবাল টাইমস।
ভারতীয় সৈন্যরা অবৈধ ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে বলে চীনের প্রচলিত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিলা মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং মঙ্গলবার বলেন, ভারতীয় সৈন্যরা চীনের রাস্তা নির্মাণের প্রেক্ষিতে দোকলাম সীমান্ত অতিক্রম করে বলে নয়া দিল্লী যে কারণ প্রদর্শন করছে তা হাস্যকর।
চীনা মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের জনমতকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে হুয়া বলেন, আমরা যদি ভারতের হাস্যকর যুক্তি মেনে নেই তাহলে কেউ যদি তার প্রতিবেশীর বাড়ির কার্যকলাপ অপছন্দ করে তাহলে সে তার বাড়িতে জোর করে ঢুকতে পারে।
তিনি প্রশ্ন করেন, এর অর্থ কি এই যে চীন যখন মনে করবে যে সীমান্ত এলাকায় বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ হুমকি সৃষ্টি করছে সে তখন ভারতের ভূখন্ডে প্রবেশ করতে পারবে? এটা কি চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না? হুয়ার বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে সমস্যার সমাধান না হলে চীনা সৈন্যরা ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে।
সোমবার রাজনাথ সিং নয়া দিল্লীতে ভারত-চীন সীমান্তে মোতায়েন ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি)-এর একটি ইউনিটের উদ্দেশ্যে বক্তৃতার সময় বলেন, চীনের পক্ষ থেকে দোকলাম অচলাবস্থা নিরসনে ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি আশা করেন।
হুয়া বলেন, এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পূর্বশর্ত হচ্ছে ভারতের সৈন্য ও সমর সরঞ্জাম প্রত্যাহার করা।
বিশ্লেষকদের মতে, দেখা যাচ্ছে চীনে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ বৈঠকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশংকা থাকা সত্তে¡ও দোকলাম সংকট বিষয়ে চীন তার অবস্থান নমনীয় করবে না।
এদিকে মঙ্গলবার চীনা রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের চীনা সংস্করণে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়, দোকলামে চীন ও ভারতের মধ্যকার বিরোধ দু’দেশের মধ্যে গভীর ফাটল সৃষ্টি করেছে। চীনা জনগণ ভুটানের মত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর উপর ভারতের অযৌক্তিক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছে। তারা উত্তর পূর্ব ভারতে গোলযোগ ও শিলিগুড়ি করিডোর সম্পর্কেও জেনেছে। চীনা জনগণ ভারতীয় সমাজে জাতীয়তাবাদের আগুন জ¦লতে ও ভারতীয় মিডিয়া ও রাজনীতিকরা কিভাবে আরেক দেশের প্রতি তাদের আঙ্গুল তুলছেন তাও দেখছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন যে নয়া দিল্লী তার প্রতিবেশীদের বলবে যে ভারত শান্তি চায়। আমরা ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে এ কথা শুধু শুনি, কিন্তু কাজে তা দেখি না। চীনে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় সৈন্যরা এখনো সেখানে অবস্থান করছে। ভারত শান্তি চায় বলে দাবির সাথে এ আচরণ মেলে না।
এতে বলা হয়, রাজনাথ সিং-এর বক্তব্যকে বিদেশী সংবাদ মাধ্যম দোকলাম নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির পর ভারতের সবচেয়ে ইতিবাচক অবস্থান বলে মনে করছে। ভারত আন্তর্জাতিক জনমতকে হতাশ করে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে বিবিসি জানায়, ডোকলাম নিয়ে দুমাসের বেশী হয়ে গেল ভারত আর চীনের মধ্যে বিরোধ চলছে। দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, আর নেতারা গরম গরম বিবৃতি দিচ্ছেন। এত উত্তেজনা সত্তে¡ও দুই দেশের বাহিনীই কিন্তু সংযম বজায় রেখেছে, কোনও হিংসাত্মক ঘটনার খবর এখনও পর্যন্ত আসে নি।
ডোকলাম নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক প্রায় তলানিতে এসে ঠেকলেও ভারত-চীন সীমান্ত যে রকম নিশ্চুপ, সেটা পাকিস্তান আর ভারতের সীমান্তে দেখা যায় না। সেখানে নিয়মিত গুলি বিনিময় হয় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে, মাঝে মাঝেই দুই দেশের সেনা সদস্যদের মৃত্যুও হয়।
কিন্তু ভারত-চীন সীমান্তে বড়জোর দুই বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি হয় - তার বেশী কিছু নয়।
দুই দেশের সঙ্গে দুই সীমান্তে কেন দুই চিত্র?
চীনে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক শৈবাল দাসগুপ্ত বলছেন, ‘ভারত আর চীনের মধ্যে একটা সমঝোতা আছে যে যতই মতভেদ হোক, সীমান্তে উত্তেজনা কোনো দেশই বাড়তে দেবে না।
দাশগুপ্ত বলেন, ‘দুটো দেশের মধ্যে এরকম সিদ্ধান্ত রয়েছে যে ফ্রন্ট লাইনে যেসব সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবেন, তাঁদের কাছে কোনো রকম অস্ত্র থাকবে না। যদি সেনা র‌্যাঙ্ক অনুযায়ী কোনো অফিসারের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিয়ম হয়, তাহলে তার নল মাটির দিকে ঘুরিয়ে রাখা থাকবে। সেজন্যই দুই দেশের সেনাসদস্যদের হাতাহাতি বা কুস্তি করার ভিডিও দেখা যায়, কোথাও গুলি বিনিময়ের ছবি দেখা যায় না। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এরকম কোনো চুক্তি নেই।’
ভারত আর চীনের সেনাদের মধ্যে যখন উত্তেজনা বেড়ে যায়, বা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয় সে সময়েও কয়েকটি দিকে নজর রাখা হয়। দুই দেশের সেনাদের মধ্যে হাতাহাতির যেসব ভিডিও দেখা যায় গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে, সেগুলো যদি কেউ খুঁটিয়ে দেখেন, তাহলেই বোঝা যাবে সৈনিকরা যেন বাচ্চাদের মতো কুস্তি লড়ছে। একে অপরকে ধাক্কা দেয়, কেউ পড়তে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কেউ কাউকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে, এটা দেখা যায় না। চড় মারা অপমান করার সামিল। তাই ধাক্কাধাক্কির সময়েও কেউই হাত ব্যবহার করে না। নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই সেনা সদস্যরা এটা করে থাকেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ