ইনকিলাব ডেস্ক : ধর্ষণ মামলায় পাঞ্জাব-হরিয়ানার স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সিবিআই আদালত। তাকে দোষী সাব্যস্ত করার সাথে সাথে ভক্তদের উন্মত্ত তান্ডব চলে পঞ্চকুলাসহ বিভিন্ন শহরে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রায় আড়াইশ’ জন। আরো সহিংসতা রুখতে নামানো হয়েছে সেনা এবং সিআরপিএফ সদস্যদের। ফিরোজপুরে কার্ফ্যু এবং ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে নয়ডা, গাজিয়াবাদ, মুজফ্ফরনগর, বাগপাট ও শামলিতে। ৩ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিমের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সম্পত্তি নিলাম করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্ট।
ধর্ষণের মামলায় ভারতীয় ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং-কে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণার পরপরই উত্তাল হয়ে উঠে পাঞ্জাব-হরিয়ানা। রাম রহিম-কে বিশেষ সিবিআই আদালত দোষী সাব্যস্ত করতেই আদালত চত্বরের বাইরে শুরু হয়ে যায় তাÐব। লাঠি, বাঁশ, ইট-পাথর নিয়ে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। লাঠি চালিয়ে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে পঞ্চকুলায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সেখানে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপেক্ষ ২০০ জন। পাঞ্জাব-হরিয়ানাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে এমন সহিংসতায় নিহত হয়েছে অন্তত ২৮ জন।
পাঞ্জাবের দু’টি রেলওয়ে স্টেশনে ইতিমধ্যেই আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন রাম রহিমের অনুগামীরা। দুই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় থানা এবং সরকারি দফতরে আগুন লাগানো হয়েছে। পঞ্চকুলা শহরের কিছু আবাসিক কলোনিতেও ভাঙচুর এবং একটি পেট্রল পাম্প ও পাঁচতারকা হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় রাম রহিমের বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা।
পঞ্চকুলার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। দূর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে আদালত চত্বরে। ওই এলাকায় ইতোমধ্যেই অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের সঙ্গে ডেরা অনুগামীদের সংঘর্ষে অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছেন। পঞ্চকুলার হাসপাতালগুলিতে রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না বলে খবর আসছে। শহরে রক্তের অভাব দেখা দিয়েছে।
অশান্তি শুরু হতেই পঞ্চকুলায় কারফিউ জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। পুলিশের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন ডেরা অনুগামীরা। লাঠি চার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যায়নি। তাই পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে খবর। পুলিশের গুলিতেই ডেরা অনুগামীদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে প্রশাসনিক সূত্রে এখনও সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতর যেখানে, হরিয়ানার সেই সিরসাতেও তাÐব প্রবল আকার নিয়েছে বলে খবর। পুলিশের সঙ্গে সেখানেও সংঘর্ষ হয়েছে ডেরা অনুগামীদের। বাবা রাম রহিমের ভক্তদের হাতে সিরসায় আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যমও। তবে শুধু সিরসাতে নয়, পঞ্চকুলাতেও সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে। মিডিয়ার একাধিক গাড়ি এবং ওবি ভ্যান নষ্ট করে দিয়েছে হামলাকারীরা। পঞ্চকুলায় থানা এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরে রাম রহিমের ভক্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। গোটা শহরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। আগুন লাগানো হয়েছে বহু গাড়িতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ৬ কলাম সেনা পাঠানো হয়েছে পঞ্চকুলায়।
পরিস্থিতি প্রবল উত্তপ্ত পাঞ্জাবেও। ভাতিন্ডা এবং মলোত রেলওয়ে স্টেশনে তাÐবকারীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লিতেও। রাজধানীর আনন্দ বিহার রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। উত্তর-পূর্ব দিল্লির লোনি চকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি বাসও, খবর দিল্লি পুলিশ সূত্রের।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ফোনে কথা বলেছেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ এবং মনোহরলাল খট্টরের সঙ্গে। অশান্তি রুখতে পাঞ্জাবে কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে রাজনাথকে জানিয়েছেন অমরেন্দ্র।
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও জানিয়েছিলেন যে, ধর্ষণের মামলায় রায় যা-ই হোক, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাবে না, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু গতকাল বিশেষ সিবিআই আদালত বাবা রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করতেই গোটা হরিয়ানার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে বাবে ভেঙে পড়েছে, তাতে স্পষ্ট যে খাট্টারের প্রতিশ্রæতি ভিত্তিহীন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং ডেরা সমর্থকদেরকে শান্তি বজায় রাখার আহŸান জানিয়েছেন। বাবা রাম রহিম নিজেও শান্তিই চাইছেন, জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। দুই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা এখন তাÐবের গ্রাসে। হরিয়ানা সীমান্ত সিল করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির পুলিশ কিন্তু তা সত্তে¡ও দিল্লিতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়া রোখা যায়নি। উত্তরাখÐ থেকেও সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।