Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আক্ষেপ সকালের ৩ উইকেট

উজ্জ্বল সাকিব-তামিম

ইমরান মাহমুদ : | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৭৮.৫ ওভারে ২৬০
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ৯ ওভারে ১৮/৩
(প্রথম দিন শেষে)


দিনের শুরুতে ১০ রানে নেই বাংলাদেশের ৩ উইকেট। দিনের শেষে ১৫ রানে অস্ট্রেলিয়ারও নেই ৩ উইকেট। মিরপুর টেস্টেও প্রথম দিনের বাকি চিত্রটা এক চড়াই উৎড়াইয়ের অমোঘ কাহিনী।
আবাহওয়ার পূর্বাভাস ছিল বৃষ্টির। আগের রাতে এক পষলা হয়ে যাওয়ায় শঙ্কার মেঘ উড়ছিল বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের আকাশে। একেবারে উবে না গিয়ে এই মেঘ এই রোদ্দুরের খেলা চললো গতকাল দিনভর। মেঘের ভার সইতে না পেরে দুপুরে মিরপুর স্টেডিয়ামকে ভিজিয়েই দিল খানিকটা। তবে তীব্র গরমে সেটা স্বস্তি হয়েই বয়ে গেল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আগত হাজারখানেক দর্শকের জন্য। তবে ম্যাচের স্বস্তি মিইয়ে গিয়েছিল টস হবার খানিক বাদেই। নতুন ‘বাদামী’ মিরপুরে উইকেটের হিসেবে টসভাগ্য ভালোই ছিল মুশফিকুর রহিমের। জিতে ব্যাটিংও নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে মাত্র ১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে সেই সিদ্ধান্তে কিছুক্ষণের জন্য হলেও হল ভুল প্রমাণীত।
টসের একটু আগেও ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন নাসির হোসেন, তাকে বল থ্রো করছিলেন মুমিনুল হক। সম্ভাব্য একাদশের চিত্র ফুটে ওঠে এতেই। ২ বছর পর টেস্ট খেলছেন নাসির। তবে মোসাদ্দেক হোসেনের অসুস্থতায় দলে ফেরা মুমিনুল হকের ফেরা হয়নি একাদশে। প্যাট কামিন্সের দারুণ বোলিং আর ব্যাটসম্যানদের বাজে শটে ঢাকা টেস্টেও প্রথম সকালেই চাপে বাংলাদেশ। আগের ওভারে সৌম্য সরকারকে (৮) বিদায় করা ডানহাতি এই পেসার পরপর দুই বলে ফিরিয়েছেন ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমানকে। দুই জনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। একরাশ শূণ্যতা এসে ভর করেছিল তখন পুরো গ্যালারী জুড়ে। বাংলাদেশের ৫০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি তবে কী একেবারেই আলো ছড়াবে না! তখনও বাকি ছিল কিছাটা চমকের।
একটা সময় এক নিশ্বাসেই উচ্চারিত হতো দুজনের নাম। সেই সুখের বাতাসে এখন আরও অনেক নামের ওড়াউড়ি। তবু আলাদা করে চেনা যায় সেই দুজনকে। বাংলাদেশের সেরা দুই পারফরমার, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা দুই বিজ্ঞাপন। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল, এক সঙ্গেই স্পর্শ করলেন টেস্ট খেলার হাফ সেঞ্চুরি। সেটিও হলো রাঙানো।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর গতিপথটা দুজনেরই ছিল প্রায় একইরকম। দুজনেরই শুরু ওয়ানডে দিয়ে। ওয়ানডে অভিষেকের ৯ মাস পর সাকিব পান টেস্ট ক্যাপ। ২০০৭ সালের মে মাসে; ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে। তামিম টেস্ট ক্যাপ পান ওয়ানডে অভিষেকের ১১ মাস পর। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ডানেডিন টেস্ট দিয়ে।
ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে এগুচ্ছিলেন সাকিব-তামিম। দুজন উইকেটে জুটি বাঁধেন খুব দ্রুতই। স্বাগতিকরা মধ্যান্হ-বিরতিতে যায় স্বস্তি নিয়েই। প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশের স্কোর সেই তিন উইকেটে ৯৬। সাকিব লাঞ্চে গিয়েছিলেন ৪৮ রান নিয়ে। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই সাকিব ছুঁয়ে ফেললেন হাফ সেঞ্চুরি। স্বভাবজাত ব্যাটিংয়ে তামিমকে ছাড়িয়েও যান সাকিব। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৬৫ বলে। টেস্ট ক্যারিয়ারে ২২তম, তবে একটা জায়গায় প্রথম। বাংলাদেশের হয়ে পঞ্চাশতম টেস্টে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন কেউ এই প্রথম! এর আগে এই মাইলফলকের ম্যাচে (৫০তম টেস্ট) আগের সর্বোচ্চ ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের- ১২ রান!
ফিফটির যুগলবন্দীর দিনে বন্ধু তামিম কেন পিছিয়ে থাকবেন। তুলনায় অনেক বেশি খেলেছেন- পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ১১৯ বলে। তবে ২৩তম অর্ধশতকের ইনিংসে ছিল তিনটি ছক্কা। তিনটিই নাথান লায়নের বলে। বুক চিতিয়ে লড়াই করে সাকিবকে নিয়ে গড়েছেন নিজেদের দ্বিতীয় শতরানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে ৯৭ বলে এসেছিল তাদের ৫০। জুটির রান তিন অঙ্কে গেছে ১৮৩ বলে। দু’জন সবশেষ ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে জুটি বাধার সময় করেছিলেন ১৩২ রান। তার আগের তিনটি জুটিতে পঞ্চাশ পর্যন্ত যেতে পারেননি একবারও।
ধীরে ধীরে এগুচ্ছিলেন তারা, রানার চাকাও ছিল সচল। জুটি টেনে নিয়ে গেছিলেন দেড়শ’তে। তবে সেটা আর লম্বা করতে দেননি গেøন ম্যাক্সওয়েল। তার অফ স্পিনে কাট করতে চেয়েছিলেন তামিম। মন্থর উইকেটের জন্য বল একটু দেরিতে এসায় ঠিক মতো শট খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। সহজ ক্যাচ চলে যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। ১৪৪ বলে তিনটি ছক্কা আর ৫টি চারে ৭১ রান করা তামিমের বিদায়ে ভাঙে তার সঙ্গে সাকিব আল হাসানের ১৫৫ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
তামিমের বিদায়ের পর চেপে ধরার সুফল খুব দ্রুতই পায় অজিরা। ম্যাক্সওয়েলের জায়গায় বল করতে আসা নাথান লায়নের বাড়তি বাউন্সে খোঁচা মেরে শেষ হয় ১১টি চারে গড়া সাকিবের ৮৪ রানের ইনিংস। এটি লায়নের ২৪৮তম শিকার। এই উইকেটে রিচি বেনোর পাশে দাঁড়ালেন অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার। ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ চা-বিরতিতে যায় ১৯০ রান নিয়ে।
দুই বছর পর টেস্ট খেলতে নামা নাসির হোসেনকে নিয়ে কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়ে যান কিছুক্ষণ অধিনায়ক মুশফিকু রহিম। তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অ্যাশটন অ্যাগারের বল স্পিন করবে ভেবে খেললেন মুশফিক, বল এলো সোজা, আঘাত হানলো প্যাডে। আম্পায়ার জোরালো আবেদনে সাড়া দিলে রিভিউ নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তাতে পাল্টায়নি সিদ্ধান্ত, ১৮ রান করে ফিরে যান মুশফিক।
অধিনায়কের বিদায়ে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছিলন নাসির হোসেন। তার সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজের ইনিংস মেরামতের প্রচেষ্টায় বাধ সাঁধে বৃষ্টি। ৬৭তম ওভার অসমাপ্ত রেখেই মাঠ ছাড়ে দু’দল। ৩৫ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর ফিরেই প্রথম বলে পয়েন্ট দিয়ে প্যাট কামিন্সকে চার হাঁকিয়ে লাইয়ের আভাষ দেন দুই বছর পর দলে ফেরা নাসির। ঠিক সেই সময় বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে ফেরেন মিরাজ। একটা রিভিউ খরচ করে ফেলেছিলেন সাব্বির রহমান, কেন সেই রিভিউ নিয়েছিলেন তিনিই বলতে পারবেন। অন্যটা মুশফিক, অনেক ভেবে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নিয়েছিলেন অধিনায়ক। তার কোনো একটা থাকলেই বেঁচে যেতেন এই অলরাউন্ডার।
নাথান লায়নের বলে শর্ট লেগে পিটার হ্যান্ডসমের হাতে ধরা পড়েন দুটি চারে ১৮ রান করা মিরাজ। বল তার ব্যাট ছোঁয়নি, ক্যাচ গেছে প্যাডে লেগে। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অসহায় হাসিতে মাঠ ছাড় তরুণ অলরাউন্ডার। তার বিদায়ে ভাঙে ৪২ রানের শঙ্কট উত্তরণীয় জুটি। মিরাজের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকেননি আরেক অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার নাসিরও। অ্যাশটন অ্যাগারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলে সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। তাতে পাল্টায় সিদ্ধান্ত, ২৩ রান করে ফিরে যান নাসির। তার বিদায়ের সময় দলের স্কোর ২৪৬/৮। আর মাত্র ১৪ রান যোগ করে তাইজুল, শফিউল ফিরে গেলে ২৬০ রানেই থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। শেষ আর শুরুটা দারুণ হল অস্ট্রেলিয়ার। শুরুতে ১০ রানে নিয়েছিল ৩ উইকেট, শেষটায় ২০ রানে ৪।
দিনের আলো তখনও বাকি। সেই সুযোগে অস্ট্রেলিয়াকে বাগে পায় বাংলাদেশও। মাত্র ১৫ রানে ওয়ার্নার, উসমান খাজা এবং নাথান লায়নকে ফিরিয়ে স্বস্তিইে আজ দিন শুরু করতে পারবে মুশফিকের দলও। ওয়ার্নারকে ফেরারন মিরাজ, লায়নকে সাকিব আর খাজা বিদায় নেন রান আউটে।

 



 

Show all comments
  • Tanvir Al Mahbub Shipon ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১১:১৩ এএম says : 0
    আজকে আরও ভালো খেলতে হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেস্ট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ