Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী মোঃ আব্দুল জব্বারের ইন্তেকাল

| প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 স্টাফ রিপোর্টার : কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী মো: আব্দুল জব্বার আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তার মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গরা হাসপাতালে ছুটে যান।

জব্বার কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। শেষ দিকে অর্থাভাবে তার চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছিল। তিনি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। আজ সকাল ১১টায় সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আব্দুল জব্বারের মরদেহ নেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তার জানাযা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
আব্দুল জব্বার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সালাম সালাম হাজার সালাম, জয় বাংলা বাংলার জয়সহ অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গান গেয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্য তিনি ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। হারমোনিয়াম কাঁধে কলকাতায় বাংলাদেশি শিবিরে ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যা¤পগুলোতে গান শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন মানুষকে। পথে পথে গণসঙ্গীত গেয়ে পাওয়া ১২ লাখ টাকা তিনি দান করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে। তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান গেয়েছিলেন। তার গাওয়া তুমি কী দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়, সালাম সালাম হাজার সালাম ও জয় বাংলা বাংলার জয় গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নেয়। আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬) ছাড়াও বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩) পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কার পান। আব্দুল জব্বারের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ শোকবার্তায় আব্দুল জব্বারের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার কণ্ঠে গান মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী দেশবাসীকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য শিল্পীকে হারাল। তার মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি। এই বরেণ্য শিল্পীর অবদান জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট এই শিল্পীর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে গাওয়া গান ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
আব্দুল জব্বারের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান বলেন, আব্দুল জব্বার ছিলেন আমাদের জাতীয় সম্পদ। তিনি চলে গেছেন ঠিকই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া গান আমরা কাজে লাগাতে পারি। তিনি এমনই একজন শিল্পী ছিলেন, যাকে কি-না নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা উদাহরণ হিসেবে অনুসরণ করে নিজেদের কাজে লাগাতে পারে। আব্দুল জব্বারের মতো ভরাট আর গম্ভীর কণ্ঠের শিল্পী আর পাওয়া যাবে না। এমন একজন শিল্পীকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। এ আমাদের কষ্টের বিষয়। সঙ্গীত বিশারদ আলম খান বলেন, আব্দুল জব্বার নিঃসন্দেহে এ দেশের প্রথম সারির কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। ছিলেন তিনি কণ্ঠযোদ্ধাও। তার কণ্ঠের গান শুনে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে ভরাট কণ্ঠের শিল্পী হিসেবে যদি কারো নাম প্রথমে নিতে হয় সেটা আব্দুল জব্বার। কিছু কিছু গান আছে যে গানগুলো আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে স্থান না পেলে কালজয়ী হয়ে উঠতো না। বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তার মতো গায়ক আর কখনোই আসবে না এই দেশে। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অপরিসীম। তিনি এই দেশের জন্য, বাংলা গানের জন্য যা করে গেছেন; তা খুব কম শিল্পীই করে থাকেন বা করেছেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অনেক কষ্টের, বেদনার। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী অ্যান্ড্রু কিশোর বলেন, জব্বার ভাই মনেপ্রাণে একজন শিল্পী ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তার গান কত বড় ভ‚মিকা রেখেছিল, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি সত্যিকার অর্থে একজন মহান শিল্পী ছিলেন। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের অন্তরে। তার গান তাকে বাংলার আকাশে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে নিশ্চয়ই।

 



 

Show all comments
  • Kamal Hossen ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১:০৭ পিএম says : 0
    Abdur Jabbar was a great singer. We lost two great artists nearly...one with Razzak and another Jabbar. I am happy that govt. will give him fare well with dignity. Why Naya Raj Razzak also did not get it? Same on the government. You can give all the honor if you think someone is doing your party openly. They are our asset. You will never get another person like Razzak, Like Jabbar. Show some respects to those who deserve it, not just politically.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ