Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : ১৯৭১-এর ১৪ মার্চ ছিল রোববার। উত্তাল মার্চের আজকের দিনটিতেও চলে অসহযোগ আন্দোলন। পাকিস্তান সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রাস্তায় আন্দোলন অব্যাহত রাখে বাঙালির বীর সন্তানেরা। সামরিক সরকারের জারি করা ১১৫ নং সামরিক ফরমানের বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারীসহ সারাদেশের মানুষ ফুঁসে ওঠে। এসোসিয়েশন অব পাবলিক এমপ্লয়িজ অব পাকিস্তানের সমন্বয় কাউন্সিলের সভায় বক্তারা অবিলম্বে এ আইন বাতিলের দাবি জানান। এরপর তাঁরা এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে চলমান অসহযোগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন এবং অফিস বর্জনের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। এদিন রাজধানী ঢাকা নগরীসহ সারাদেশ ছিল উত্তাল। দিন যত যাচ্ছিল আন্দোলন ততো তীব্র আকার ধারণ করেছে। ১৪ মার্চ সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয় সভা-সমাবেশ ও মিছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, পেশাজীবী, মহিলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে এসব মিছিল ও সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানীদের ঠেকাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে কড়া নজর রাখা হয়, যাতে পশ্চিম পাকিস্তানে কোন সম্পদ পাচার না হয় বা সামরিক বাহিনী কোন রসদ সরবরাহ করতে না পারে।
আজকের দিনে সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা করতে সকাল বেলায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপ নেতা আবদুল ওয়ালী খান বৈঠক করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের ধানম-ির বাসভবনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামরুজ্জামান এবং ওয়ালী ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। রাতে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু যে কোন আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার এবং সম্ভাব্য যে কোন বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করা যাবে না। আমাদের ভবিষ্যত বংশধর যাতে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বাংলা একাডেমীতে লেখক সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এইদিন বের করা হয় লেখক শোভাযাত্রা। ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে জনসভার আয়োজন করে। ডিআইটি টিভি ভবন প্রাঙ্গণে টিভি ও নাট্যশিল্পীরা সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন তাঁরা। বাংলাদেশে ছুটিতে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙালি কর্মচারীদের পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত না গিয়ে নিজ নিজ এলাকার সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এক বিবৃতিতে তারা এই অনুরোধ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি অনুযায়ী পার্লামেন্টের বাইরে সংবিধান সংক্রান্ত সমঝোতা ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথকভাবে দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরামর্শ দেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৭১ সালের এইদিনে করাচীর নিশাত পার্কে এক জনসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন।
অর্থাৎ পূর্বাংশে আওয়ামী লীগ এবং পশ্চিমাংশে পিপলস্ পার্টি সরকার গঠন করবে। ভুট্টোর এরূপ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে এদিনেই ভাওয়ালপুর ইউনাইটেড ফ্রন্টের নেত্রী বেগম তাহেরা মাসুদ বলেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের বিরোধিতা করে মি. ভুট্টো অগণতান্ত্রিক ও উস্কানিমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছেন এবং রাজনৈতিক সঙ্কটকে ঘনীভূত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ