Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যাত্রী পরিবহনে এগিয়ে থাকবে রেল

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সড়ক ও রেলপথে এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে ২০৪১ সালে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

২০৪১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সড়ক ও রেলপথে এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে। সড়কপথের চেয়ে রেলপথেই তুলনামূলক বেশি সুবিধা পাবে যাত্রীরা। সে কারনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বেশিরভাগ যাত্রী ট্রেনে চলাচল করবে। তখন এই রুটে ৫৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহনে একক কর্তৃত্ব থাকবে রেলের। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ‘কমপ্রিহেনসিভ ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান বিটুইন ঢাকা অ্যান্ড চিটাগাং’-শীর্ষক পরিকল্পনার অন্তর্বতী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০৪১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন চাহিদা এবং তা পূরণে করণীয় নির্ধারণে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করছে জাইকা। জাইকার অর্থায়নে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করছে জাপানের পাডিকো কোম্পানি লিমিটেড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বর্তমানে বছরে ৬১ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। এর মধ্যে প্রায় ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার বা ৫৫ শতাংশ যাত্রী বাসে যাতায়াত করে। আর ট্রেনে যাতায়াত করে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার বা ২৭ শতাংশ যাত্রী। বাকিরা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করে। বাসে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানির আধিপত্যই সবচেয়ে বেশি। এ রুটে সড়কপথে চলাচলকারী প্রায় ৯৯ শতাংশ বেসরকারি বাস। অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে প্রায় ৫০টি কোম্পানি এ রুটে বাস পরিচালনা করে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালে এই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যাবে। তখন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৫৩ শতাংশ যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করবে। ১৮ শতাংশ যাত্রী যাতায়াত করবে বাসে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রী পরিবহনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রেলপথ। এ পথে বছরে বর্তমানে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার বা ২৭ শতাংশ যাত্রী যাতায়াত করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনের অনেক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এই রেলপথে দৈনিক মাত্র চারটি আন্তঃনগর ও বিরতিহীন ট্রেন পরিচালনা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বছরে ৫ লাখ ৪৯ হাজার আকাশপথে ও এক লাখ ৮৩ হাজার নৌপথে যাতায়াত করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৪১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রী চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে তিনগুণের বেশি। সে সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বছরে প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ যাতায়াত করবে। এর মধ্যে ৫৩ শতাংশ বা এক কোটির বেশি মানুষ যাতায়াত করবে রেলপথে। এর পরই ব্যক্তিগত গাড়িতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে যাত্রীরা। প্রায় ২০ শতাংশ বা ৩৮ লাখ মানুষ ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে। স্বাভাবিকভাবে তখন বাসে যাতায়াতের সংখ্যা কমে আসবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ১৮ শতাংশ বা প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ এ রুটে সে সময় বাসে যাতায়াত করবে, যা বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া ২০৪১ সালে আকাশপথে ১৩ লাখ ও নৌপথে ৬ লাখ মানুষ যাতায়াত করবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াতে ২০৪১ সালে রেলপথকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণও উঠে এসেছে কমপ্রিহেনসিভ ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে। এতে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে। আবার রেলপথেও এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে। এতে সড়কপথের চেয়ে রেলপথেই তুলনামূলক বেশি সুবিধা পাবে যাত্রীরা। তখন ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগবে মাত্র তিন ঘণ্টা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়া যাবে সাড়ে চার ঘণ্টায়। তবে সড়কপথে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল থাকায় বাসগুলো তা পরিহার করে চলবে। এতে বাসে যাতায়াতে সময় খুব বেশি কমবে না। বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে তিন ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম যেতে সে সময় ট্রেনে ভাড়া পড়বে এক হাজার ২০০ টাকা, বাসে ৬৫০ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়িতে খরচ পড়বে দুই হাজার টাকা এবং বিমানে চার হাজার টাকা। প্রতিবেদনে এ রুটের উন্নয়নে বেশকিছু জটিলতাও তুলে ধরা হয়েছে মাস্টারপ্লানে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রকল্প গ্রহণে দ্বৈতনীতি। যেমন: ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সড়কপথে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক বিভাগ। অন্যদিকে, সেতু বিভাগ এ রুটে এক্সপ্রেস সড়ক ও রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করতে যাচ্ছে। অথচ এক্সপ্রেস রেলপথ নির্মাণে পৃথক সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে রেলওয়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাসে যাতায়াতে সময় লাগে ছয় থেকে আট ঘণ্টা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে সড়কপথে যাতায়াতে বড় বাধা হলো কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু। তবে চার লেনের কারণে বাকি অংশ দ্রæত যাতায়াত করা যায়। আর বিমানে যাতায়াতে সময় লাগে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা। তবে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে বিশেষ করে ঢাকা শহরে কয়েক ঘণ্টাও লেগে যায়। বিমানে যাতায়াত জনপ্রিয় না হওয়ার এটি বড় কারণ। সড়কপথের বেশকিছু সমস্যাও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, সড়কপথে যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা অনেক কম। কারণ সড়কপথে প্রবেশ সংরক্ষিত বা কোনো এক্সপ্রেসওয়ে নেই। একই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল করে। এছাড়া সড়ক ও সেতু সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণও করা হয় না। সড়ক নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। আবার অত্যাধিক ওভারলোডেড পণ্যবাহী যান চলাচল করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে। সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাও নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে।
মাস্টারপ্লানে বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রেলপথে যাতায়াতে সময় লাগে পাঁচ-সাত ঘণ্টা। এ রুটে দৈনিক চার জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন যাতায়াত করে। যদিও চাহিদা এর চেয়ে অনেক বেশি। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে রেলপথে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঘুরানো পথ। অর্থাৎ ট্রেন ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রামের দিকে না গিয়ে উল্টোপথে টঙ্গী-ভৈরববাজার হয়ে লাকসাম যায়। এর পর সোজা পথে চট্টগ্রাম যায়। এতে ২১০ কিলোমিটার দূরত্বের পথ ট্রেনে যেতে ৩২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে। এছাড়া ট্রেনের গতিও অনেক কম। এ রুটে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে। তবে ডাবল লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ সক্ষমতা তিন-চার গুণ বেড়ে যাবে। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যাত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ