Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছেই

৮ মাসে নিহত ৩ হাজার আহত সাড়ে ৬ হাজার

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সড়ক দুর্ঘটনা থামছেই না। প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে প্রাণ। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও। গত আট মাসে সারা দেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত ও সাড়ে ৬ হাজার আহত হয়েছেন। প্রায় আড়াই হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সোমবারও মানিকগঞ্জে গাড়িচাপায় নিহত হয়েছেন পুলিশের এক সাব ইন্সপেক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে, খানাখন্দে ভরা মহাসড়কে নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ না হওয়া, উল্টোপথে চলাচল এবং ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলই এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। এর সাথে বেপরোয়া গতি এবং পরিবহন শ্রমিকদের খামখেয়ালীপনাকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি গত ৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করেছে। সেই তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। তবে শেষের তিন মাসে এর হার কিছুটা কম রয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রæয়ারিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আর এই আট মাসে সর্বনিম্ন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে আগস্ট মাসে। এই মাসে ২১৭টি দুর্ঘটনায় ২৭৯ জন নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া জানুয়ারিতে ৩৫০টি দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন, মার্চে ৩৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৬২, এপ্রিলে ৩২০টি দুর্ঘটনায় ৩৪৯ জন, মে মাসে ৩৪৬ দুর্ঘটনায় ৪১০ জন, জুনে ২৬৫ দুর্ঘটনায় ৩৩৩ জন এবং জুলাইয়ে ২১৯ দুর্ঘটনায় ২৭৯ জন নিহত হয়েছে। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে জানিয়েছেন এসব দুর্ঘটনায় তারা ৭টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারলোডিং ও ওভারটেকিংয়ের সময় নিয়ম ভাঙা, বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের বেহাল দশা, ত্রæটিপূর্ণ বা ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ।
মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য মোটরচালিত রিকশা। এসবের কারণে মহাসড়কে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। কিন্তু সেদিকে প্রশাসনের নজর নেই বললেই চলে। ভুক্তভোগিদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারন থ্রি-হুইলার চলাচল। এগুলো নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা বরাবরই বলে আসছি। তিনি বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য জেলা পুলিশ প্রশাসনকে এগিয়ে আসাসহ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ এ যানবাহনগুলো। স্থানীয় সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারা দিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করছে। দুরপাল্লার বাস চালকরা জানান, মহাসড়কের বড় যন্ত্রণা এখন সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা। তাও আবার এগুলো উল্টো পথে চলে। হঠাৎ করে উল্টো পথে আসা একটা গাড়ি আমাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। গতকাল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়িচাপায় পুলিশের এক এসআই নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা পুলিশকে বলেছে, উল্টোপথে আসা একটা রিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা চলতি বছরের চেয়ে ২০১৬ সালে তুলনামূলক কম ছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে দুর্ঘটনা ঘটে ২৯৫টি। চলতি বছর জানুয়ারিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৫০টি। গত বছর ফেব্রæয়ারিতে ৩৪৯টি দুর্ঘটনায় ৩৫৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। চলতি বছর ফেব্রæয়ারিতে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত বছরের মার্চে দুর্ঘটনা ঘটে ২৯৬টি। এতে ৩০৯ জন নিহত ও ৬২৬ জন আহত হয়। চলতি বছর মার্চে ৩৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৬২ জন নিহত হয়েছে। গত বছর এপ্রিলে ২৯৬টি দুর্ঘটনায় ৩০৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। আর আহত হয় ৭০৫ জন। চলতি বছর এপ্রিলে ৩২০টি দুর্ঘটনায় ৩৪৯ জন নিহত হয়েছে।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে কমলেও চলতি বছরের শুরু থেকেই তা আবার বেড়ে গেছে। গণপরিবহন খাতের অস্থিতিশীলতাই এর প্রধান কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা হ্রাসসহ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ