Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে -টিআইবি

দুই বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ৩৮৭

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার প্রবণতা বিদ্যমান। আশঙ্কাজনকভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বাড়ছে। ২০১৬ সালে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ১৯৫ জন। ২০১৫ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হন ১৯২ জন। দুই বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হন ৩৮৭ জন। এ ছাড়াও দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। বড় দুর্নীতিবাজদের সরকার সুরক্ষা করছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০১৬ : দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের উপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল রোববার টিআইবির সম্মেলন কক্ষে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সময় বক্তৃতা করেন। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। লিখিত বক্তব্যে গবেষণার প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত মেয়াদে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করা হয়েছে।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে তথ্য ও মতামত প্রকাশের বিরুদ্ধে কিছু বিধানের অপব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা উদ্বেগজনক অপব্যবহার করা হচ্ছে। আইনের ওই ধারা বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন উদ্যোগের পরও বাংলাদেশে দুর্নীতি ও ঘুষ, অর্থপাচার, মৌলিক স্বাধীনতার ব্যত্যয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কাঠমোর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর নয়। এর পেছনে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, নির্বাহী বিভাগ ও প্রশাসনের আধিপত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোনো কাঠামো নেই এবং এসব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ব্যবস্থা দুর্বল উল্লেখ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ পর্যাপ্ত নয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কিছু ক্ষেত্রে আইনের অনুপস্থিতি রয়েছে- এমন চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে আইনের প্রয়োগ সীমিত বা চর্চায় ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। দলীয় বিবেচনায় আইনের প্রয়োগ হচ্ছে। আইনি সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়েছে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করা, সরকারি কর্মচারীদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, অধিকার ও দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য পাবলিক সার্ভিস আইন-প্রণয়ন, পুলিশকে জনবান্ধব করতে পুলিশ আইন ১৮৬১ সংস্কার, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ধারা বাতিল করণ, নির্বাচন কমিশনের গঠন, কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে আইন-প্রণয়ন, তথ্য প্রযুক্তি আইন ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানিক সুপারিশে বলা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক সংস্থাগুলোর জনবল কাঠামো পর্যালোচনা করে জনবল বৃদ্ধি, প্রেষণে নিয়োগের পরিবর্তে নিজস্ব কর্মীদের পদায়ন, দক্ষতা অনুযায়ী সুবিধা প্রদান, আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি-দুর্নীতি দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানের (দুদক, সিএজি, বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। এ ছাড়াও প্রয়োগিক পর্যায়ের সুপারিশে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আইনের চোখে সকল নাগরিক সমান হলেও দেশে সকল স্তরে বৈষম্য-বিভাজন ও অনিয়ম বিদ্যমান। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। সব জায়গায় এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা বড় ধরনের অর্থ পাচার করেন তাদের আইনের আওতায় না এনে রাষ্ট্রীয়ভাবেই কার্যত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। দেশের বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বিচারের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে।



 

Show all comments
  • জুবায়ের ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:১৮ পিএম says : 0
    আমি তাদের সাথে একমত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিআইবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ