Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে চলছে টার্গেট কিলিং

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে পাহাড়ি উপজাতি সন্ত্রাসী চক্রগুলো পরিকল্পিতভাবে একের পর এক অশান্তি ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে প্রশিক্ষণ ও অবৈধ অস্ত্রসহ নানা ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে ওই চক্রগুলো। চালানো হচ্ছে টার্গেট কিলিং। বাঙালি ব্যবসায়ী ও মোটরসাইকেল চালকরা ওই কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। পরিকল্পিতভাবে একের পর এক খুন ও গুম করা হচ্ছে। একই সাথে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিশাল রুটও গড়ে তুলেছে পাবর্ত্য এলাকায়। এতে অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। সৃষ্টি হচ্ছে নানা সঙ্ঘাতের। গত কয়েক যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পাহাড়ি উপজাতি সন্ত্রাসী চক্রগুলো পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি এবং অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলতে সক্রিয় রয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা দেশপ্রেম নিয়ে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করায় এখন বড় ধরনের সঙ্ঘাত থেকে মুক্ত রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা। শান্তিতে বসবাস করছে এসব জেলার বাঙালি ও উপজাতিয় পরিবারগুলো। মাঝেমধ্যে পাহাড়ি উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাইরের ইন্ধনে নারকীয় হত্যাকান্ড চালায়। যা এখন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ২১ বছর আগে নির্মমভাবে ৩৫ জন কাঠুরিয়া হত্যাকান্ডের স্মরণে এখনো কেঁদে উঠে পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ সময়ে এ হত্যাকান্ডের বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ নিহতদের পরিবার। ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ শান্তিবাহিনীর হাতে খুন হয় রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালী এলাকার ৩৫ কাঠুরিয়া। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা সিন্দুকছড়ির দুর্গম তৈকর্মা পাড়া এলাকা থেকে দু’হাত পিছমোড়া বাঁধা অবস্থায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক রবিউল ইসলামের (২৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। সে গুইমারা উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। গুইমারা থানা পুলিশ জানিয়েছে, রবিউল ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়। এদিকে রবিউল ইসলাম নিহত হওয়ায় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ফরাজী শাহাদাত হোসেন সাকিব এক বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সংশ্লিষ্টরা জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যেমন বিচার পায়নি, তেমনি নিখোঁজ ব্যক্তিরা হয়তো ফিরে আসবে সে প্রতীক্ষায় আছে তাদের পরিবার-স্বজনরা। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে অভাব-অনটনে দিন পার করছে তাদের পরিবার। এসব হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে জেলায় দফায় দফায় হরতাল-অবরোধে উত্তাল হয়েছে। এ ছাড়াও মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং প্রশাসনের কাছ থেকে বিচারের আশ্বাস মিললেও বাস্তবে একটিরও বিচার হয়নি। এদিকে একের পর এক মোটরসাইকেল চালকদের খুন, অপহরণ ও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে খাগড়াছড়িতে। সেখানে যাত্রীবেশী সন্ত্রাসীদের হাতে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক খুন, অপহরণ, গুম ও হামলা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সাড়ে ছয় বছরে খাগড়াছড়িতে অন্তত আটজন মোটরসাইকেল চালক যাত্রীবেশীদের হাতে খুন হয়েছে। গুম হয়েছেন আটজন। এদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই খাগড়াছড়ির বাসিন্দা। অপহরণ হয়েছে অন্তত এক ডজন। এ ছাড়া অস্ত্রের মুখে মোটরসাইকেল ছিনতাই ও চুরি হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বাঙালি-উপজাতি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারা এসব ঘটনাকে টার্গেট কিলিং হিসেবে দেখছেন। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এসব ঘটনার ক‚লকিনারা পেতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। স¤প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে পার্বত্য জেলাগুলোতে তৎপর একটি গোয়েন্দা সংস্থা। একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, দুটি কারণে পাহাড়ে এ ধরনের টার্গেট কিলিং হচ্ছে। প্রথমত, পার্বত্য জেলাগুলোকে অশান্বত করার পাঁয়তারা। এতে লাভবান হচ্ছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলেই তারা চাঁদার হার বাড়িয়ে দেয়। কর্মসূচির নামে সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালিদের কাছ থেকে আদায় করে কোটি কোটি টাকা। দ্বিতীয়ত, মোটরসাইকেল চালকরা খুব সহজে মিশে যেতে পারেন পাহাড়িদের সঙ্গে। পেশাগত কারণে তারা প্রবেশ করে দুর্গম জায়গাগুলোতে। সেখানে উপজাতি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা অনেক সময় দেখে ফেলে তারা। এরপরই টার্গেটে পরিণত হতে হয় তাদের। যার শেষ পরিণতি খুন অথবা গুম। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত প্রায় ছয় বছরে ১৬ জন মোটরসাইকেল চালক খুন ও গুম হয়েছে। জেলার মহালছড়ি ছাদিকুল ইসলাম, মাটিরাঙার আজিজুল হাকিম শান্ত, আব্দুর রহিম, গুইমারা নিজাম উদ্দিন সোহাগ, দীঘিনালার শাহ আলম, আব্দুস সাত্তার, চান মিয়া ও সর্বশেষ পার্শ্ববর্তী লংগদু উপজেলার নুরুল ইসলাম নয়ন খুন হন খাগড়াছড়ি জেলা সদরের যৌথ খামার এলাকায়। নয়ন হত্যাকান্ডটি দেশব্যাপী আলোচনায় এলেও অন্য হত্যাকান্ডগুলো তেমন কোনো আলোচনায় আসেনি। প্রতিটি খুন, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের জন্য দায়ী করা হচ্ছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে। এর আগে গত ১ জুন খাগড়াছড়ির যৌথ খামার এলাকায় খুন হন লংগদু উপজেলার যুবলীগের নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন। তার এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে পরের দিন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক পাহাড়ির বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ