Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে অবৈধ অস্ত্র

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ছোট আগ্নেয়াস্ত্র আসছে অবাধে। সীমান্ত নিরাপত্তায় জড়িতদের ম্যানেজ করে ৪৮টি পয়েন্ট দিয়ে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করায় দেশের ভেতরে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করলেও এদের নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ভেদ করে কিভাবে এত অস্ত্র দেশে ঢুকছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ সীমান্ত পেরিয়ে এভাবে অস্ত্রের চালান ঢুকতে থাকলে দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃংখলায় মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়বে। অবৈধ অস্ত্রের পেছনে আন্তর্জাতিক চোরাচালানিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কও কাজ করছে। তারা বাংলাদেশকে অস্ত্র ব্যবসার রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এ সুযোগে এসব অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি অংশ সহজেই বাংলাদেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাচ্ছে।
পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের অনেক সীমান্ত এলাকাই অরক্ষিত। সীমান্ত নিরাপত্তায় যারা কাজ করছেন তাদের আরো সক্রিয় ভ’মিকা পালন করতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলা পুলিশকেও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারীদের শনাক্তকরন এবং গ্রেফতারে সোর্স নিয়োগ বাড়াতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক পুলিশ প্রধান নূর মোহাম্মদ বলেন, দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কমানো এবং কেনা-বেচায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে আইন-শৃংখরা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‌্যাব-৫ ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাকিবুল ইসলাম খান জানান, তার নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত একটার দিকে বিজিবি-৯ সদস্যদের নিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের আজমতপুরের বাগিচাপাড়া গ্রামের খালেদ হোসেন বাবুর বাড়ির পাশে অভিযান চালায়। সেখানে অস্ত্র বিক্রির সময় হাতেনাতে ভারতের মালদা জেলার কালিয়াচক থানার চাকমাইলপুর গ্রামের শের মাহমুদের ছেলে কাদির শেখ (৫৭) ও তার স্ত্রী আলেকনুর বিবি (৫৩) কে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি বিদেশি পিস্তুল, ৮টি ম্যাগজিন ও ২৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। আটকরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮, ১৯ ও ২৫ জুন রাজধানীর তুরাগের মিরপুর-আশুলিয়া বেড়িবাঁধ সংলগ্ন দিয়াবাড়ি খাল থেকে তিন দফায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বস্তাভর্তি এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ খালের পানিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের সপ্তাহ না পেরুতেই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর সেই জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জন মানুষ প্রাণ হারান। কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিও নিহত হয়। এদিকে উত্তরার দিয়াবাড়ি খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ জব্দের ঠিক এক বছর পর গত ১ জুন রাতে রাজধানীর অদূরে রূপগঞ্জের পূর্বাচলে কাছাকাছি আরও দুটি খাল থেকেও অস্ত্র-গোলাবারুদের সন্ধান মেলে। দুটি ঘটনায় পাওয়া অস্ত্রের চালানের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, দুটি চালান একই গোষ্ঠীর। যদিও এখন পর্যন্ত দুটি ঘটনার কোনোটিরই রহস্য ভেদ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে মূর্হুতে রাজধানীসহ দেশব্যাপী জঙ্গি বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলছিল, ঠিক তখন এত বড় অস্ত্র চালান উদ্ধারের ঘটনায় জঙ্গি বিরোধী অভিযানকেই চ্যালেঞ্জর মুখে ফেলে দেয়। যদিও গত এক বছরে জঙ্গিবিরোধী প্রায় ২০টি অভিযানে ৫৭ জন জঙ্গি নিহত ও অর্ধশত জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেসব অভিযান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদও জব্দ করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে স¤প্রতি ধরা পড়া আগ্নেয়াস্ত্রের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ৪৮টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের চালান ঢুকছে। সবচেয়ে বেশি আসছে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে। ভারতে তৈরি ৭.৬৫ পিস্তল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনছে চোরাকারবারিরা। সেই অস্ত্র বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। আর ৯এমএম পিস্তল সীমান্তে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। সেই অস্ত্র ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে অন্য জেলায় পৌঁছানোর পর। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী জেলা নেত্রকোনা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং উপকূলীয় বরিশালের বিভিন্ন স্থান দিয়ে ছোট-বড় শত শত অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ