Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সু চির ভাষণের সমালোচনায় মুখর বিশ্ব নেতারা

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রত্যাখ্যান করেছেন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যে ভাষণ দিয়েছেন তার সমালোচনার ঝড় বইছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় থেকে। মঙ্গলবারের ওই ভাষণে সু চি রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করেছেন, কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিষয়ে কিছু বলেননি। অথচ রাখাইনে ভয়াবহ নির্যাতনের জন্য সেনাবাহিনীকেই দায়ী করছে রোহিঙ্গারা। আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে আসতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে শত শত রোহিঙ্গার, আবার অনেকে এসেছেন গুলিতে আহত হয়ে কিংবা বয়ে এনেছেন নিজের অগ্নিদগ্ধ শরীর। অথচ সু চি বলেছেন, অধিকাংশ মুসলিমই রাখাইনে অবস্থান করছে। তিনি মুসলিমরা সেখান থেকে পালাচ্ছে কেন সেটিও খুঁজে বের করার কথা বলেছেন। রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের নেতারা ইতোমধ্যেই সু চির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এ বক্তব্যকে সেনাবাহিনীর বক্তব্য বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সু চিকে ফোন করে বলেছেন, তার বক্তব্যকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন যে, শরণার্থীদের যাচাই করে ফিরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু তিনি একই সাথে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার দিকেও নজর দিতে বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসও সামরিক অভিযান বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ক্ষোভের দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে সক্রিয় হওয়ার আহবান জানিয়েছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত মিয়ানমারের ট্র্যাজেডির অবসান হয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, রাখাইনে সামরিক অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মানবিক সহায়তার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিগত নিধন বন্ধে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ করে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য তারা নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে একটি উদ্যোগ নেবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মিয়ানমার পরিদর্শনে যে আহবান সু চি জানিয়েছেন তা এক ধাপ অগ্রগতি, কারণ আগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেও রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধ করার কথাই বলছেন। আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সু চির সমালোচনা করে বলেছে তিনি বালিতে মাথা গুঁজে আছেন।
এদিকে মিয়ানমারে নেত্রী অং সান সু চিন ভাষণ প্রত্যাখ্যান করেছেন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠন ও নেতারা। তারা বলছেন, সূ চি সব জেনেও না জানার ভান করেছেন এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মনে করে, এই ভাষণে সেনাবাহিনীর বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করা হয়েছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা গত তিন সপ্তাহে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো প্রতিদিন আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।
রোহিঙ্গারা বলছে, নির্যাতনের কারণেই তারা তাদের নিজের গ্রাম ও ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন এবং সু চি সেটি ভালো করেই জানেন। তারপরেও কেন এতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে, সে সম্পর্কে জানা নেই বলে সু চির দেয়া বক্তব্য ক্ষুব্ধ করেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে।
রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠন -আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম লন্ডন থেকে সংগঠনটির কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। তিনি বলেছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে অং সান সূ চি পুরোপুরি অসত্য বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ‘সু চি তার বক্তব্যে যা বলেছেন তা মোটেও সঠিক নয়। তার না জানার মতো কোন কারণ নেই। সময়ে সময়ে রোহিঙ্গারা তাকে সব জানিয়েছে- কী হচ্ছে আর না হচ্ছে। আর সু চি জেনেও না জানার মতো করছেন। শি ইজ অ্যা প্রিটেন্ডার। একই সময়ে তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। আমরা তো খালি হয়ে গেছি সেটা আপনারা দেখছেন তো। ওখানে আছে কি এখন? মানুষ তো একদমই নাই হয়ে গেছে সেখানে। আমার মন্তব্য হলো উনি ভনিতা করছেন ও মিথ্যা কথা বলছেন। জেনেও না জানার মতো আচরণ করছেন। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা মূলত অবস্থান করছেন কক্সবাজার জেলার শরণার্থী শিবিরগুলোতে। এই দফাতে নতুন করে আসা শরণার্থীদেরও একটি বড় অংশকে এসব শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
এমনই একটি কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মোহাম্মদ নূর বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কারণেই লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু সূ চি এই সত্যকে গোপন করেছেন।
‘সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেছেন সু চি। অত্যাচার না করলে, নির্যাতন না করলে, গুলি না করলে, কাটাছেঁড়া না করলে মানুষ কেন আসবে এখানে। জীবনেও আসতো না। মিয়ানমারে মুসলিম ছিলো ১২ লাখ। এর মধ্যে সাত লাখই তো এখানে এসে পড়েছে। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারলে কি একদেশ থেকে আরেক দেশে পালিয়ে আসে? সূ চি সামরিক বাহিনীর লোকজনকে ভয় পান। সেজন্যই এভাবে বলেছেন, বলেন তিনি।
মিজ সু চি তার ভাষণে কী বলবেন তা নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিলো রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনের। কিন্তু তার ভাষণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই তৈরি করেছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক রোহিঙ্গা ইন্টেলেকচুয়াল কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট ড: লা মিন্ট বলেছেন, অং সান সূ চি-র বক্তব্য আর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বক্তব্যকে তারা আলাদা করতে পারছেন না। তিনি বলেন, তার বক্তব্য আর সেনাবাহিনীর বক্তব্যের সাথে কোন পার্থক্য নেই। একই কথা বলেন তারা। এটা সেনাবাহিনীরই বক্তব্য। উনি যা বলেছেন তার বক্তব্যের ৯০ ভাগই মিথ্যা কথা। রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি যা বলেছেন সবাই আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।
এর আগে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও তার সরকার রাখাইন রাজ্যের ভয়াবহ রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে বালিতে মাথা গুঁজে রেখেছেন বলে সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সু চির বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। গোমেজ বলেন, অং সান সু চি তার বক্তব্যের মাধ্যমে আবারও দেখিয়েছেন যে, তিনি ও তার সরকার রাখাইন রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়ে বালিতে তাদের মাথা গুঁজে রেখেছেন। সূত্র : এএফপি ও বিবিসি।



 

Show all comments
  • নাঈমুর রহমান ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০৬ পিএম says : 0
    সমালোচনা নয়, চাই পদক্ষেপ।
    Total Reply(0) Reply
  • Halim Khan ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪১ পিএম says : 0
    সুচি'র আপরাধ এত জঘন্য যাহা মানবতার সব রের্কড ফেল করেছে,
    Total Reply(1) Reply
    • B.Chakma ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৭ পিএম says : 4
      Yes
  • nazim uddin ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৯ পিএম says : 0
    জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনের নামে অং সান সুচি বিশ্বকে রক্তচক্ষু প্রদর্শন করেছে। তাই জাতিসংঘসহ সকল রাষ্ট্রের উচিত মায়ানমার সরকার এবং সামরিক জান্তাকে উচিত শিক্ষা দেয়া, প্রয়োজনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োগ করা এবং তাদের উপর স্হায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, যতদিন না তারা রাখাইনদের উপর অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নৃশংসতা বন্ধ করে!
    Total Reply(0) Reply
  • Raisul Islam ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:৪৩ পিএম says : 0
    Suchi is only liable for this genocide which has been going on in Myanmar.He insisted on Rohingaya killing. Worlds' leader should cast out Suchi as well as Myanmar, otherwise they will not give in.
    Total Reply(0) Reply
  • Rasel Khan ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৪ পিএম says : 0
    লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম আজ বাংলাদেশে আশ্রিত।কিন্তু সুচি তার ভাষণে বললেন, তারা কি জন্য পালাচ্ছে আমি জানি না।তিনি সত্যিই বালির ভিতর মাথা গুঁজিয়ে রেখেছেন!এই রকম মিথ্যাবাদীকে শান্তির জন্য নোবেল দেয়া হলো??
    Total Reply(0) Reply
  • Raihan Uddin ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৭ পিএম says : 0
    সুচিকে নিয়ে সমালোচনা করে কিছুই হবেনা, এখন দরকার রণতরী, সামরিক শক্তি প্রয়োগ
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuzul Alam ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:০৭ পিএম says : 0
    সূচি এখন রক্ষক থেকে এখন ভক্ষক হয়েছে ।সুতরাং কোনো আহ্বানে সাড়া দেবে না সূচি ।
    Total Reply(0) Reply
  • AD Bhuiyan ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:০৯ পিএম says : 0
    সু কি - র ভাষণটি সেনাবাহিনীকে গণহত্যার দায় থেকে দায়মুক্তি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahinur Rahman Jewel ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:১০ পিএম says : 0
    অং সাং সুচীকে বর্তমান বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে খতরনাক মহিলার তকমা দিয়ে বিচার করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Al Faisal ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:১১ পিএম says : 1
    সুচি ও তার সামরিক জান্তাদের অবশ্যই মুসলিমদের প্রতিটি রক্ত কনিকার কঠিন মূল্য দিতে হবে ৷
    Total Reply(0) Reply
  • Zahid jnu ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৫ এএম says : 1
    no comment...its not the end of drama
    Total Reply(0) Reply
  • kazi hasan ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৭ পিএম says : 0
    সুচি'র আপরাধ এত জঘন্য যাহা মানবতার সব রের্কড ফেল করেছে,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সু চি

১১ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ