Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব সবুজায়নকে উৎসাহিত করেছে ইসলাম

| প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা মুফতী মোঃ ওমর ফারুক
\ এক \
মানুষের জীবন ধারনের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু দরকার তন্মধ্যে গাছপালা তরুলতা ফলজ,ঔষধি,ইত্যাদি বৃক্ষরাজির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শ^াস প্রশ^াস নেওয়া ব্যতীত কোন মানুষ যেমন এক মুহূর্ত বাচঁতে পারে না। তদ্রƒপ গাছপালা ব্যতীরেখে বসবাস যোগ্য কোন সুন্দর সমাজ,পরিবেশ আশা করা যায় না। গাছ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। মানুষের জীবনের সাথে গাছের সম্পর্ক অংঙ্গা অঙ্গীভাবে জড়িত। বৃক্ষরোপণ একটি আদর্শ কাজ যা মানুষের সুখময় জীবন-যাপনের অন্যতম উপকরণ। বৃক্ষরোপন হচ্ছে হালাল জীবিকা নির্বাহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ব্যবসা-বানিজ্য চাকুরী শিল্প কল কারখানা সহ আয় রোজগারের যে সকল মাধ্যম আছে তন্মধ্যে অতি উত্তম ও পূণ্যময় পেশা হচ্ছে বৃক্ষরোপন বা নার্সারী। যদিও সমাজে ইহাকে এতটা সম্মানের সাথে বিবেচনা করা হয় না। পৃথিবীতে অনেক পেশা এমন আছে যার গুণাগুণ বা কর্মফল ক্ষণস্থায়ী,সাময়িক খুব কম সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় কিন্তু গাছের চারা বা বৃক্ষরোপন যার ফলাফল দীর্ঘমেয়াদী,অনেক সময় যার ধারাবাহিকতা জনম জনম অব্যাহত থাকে। তাই কোন রাষ্ট্রীয় অথিতি অথবা মহা মনিষীগণ কোথাও ভ্রমণ বা পরিদর্শণ করলে সে স্থান বা এলাকায় দু’চার টি গাছের চারা রোপন করেন, যেন তার স্মৃতি দীর্ঘকাল ঠিকে থাকে ।
অনেক সময় দেখা যায় বড় বড় গাছের ওপর ভর করে ছোট ছোট গাছ বেড়ে ওঠে, বংশ বিস্তার করে, এতে বড় গাছ ছোট গাছটিকে আদর সোহাগ দিয়ে বড় করে তুলে। তার গতিতে চলতে দেয় তাকে কোন প্রকার বাধাঁ দেয় না তার ওপর কোন রকম জুলুম করে না। কেহ গাছের নীচে বিশ্রাম নিতে চাইলে অথবা গাছের (সন্তান সন্ততি) ফলমূল নিতে চাইলে গাছ কাউকে মানা করে না,গাছ তার ছায়া ও বাতাস দিতে কারো প্রতি কোন কার্পণ্য করে না,কারো প্রতি সদয়,কারো প্রতি নির্দয় হয় না,কাউকে কর্কষ ভাষায় ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয় না, কারো সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায় না।
কিন্তু সৃষ্টির সেরা মানুষ ছোটদের প্রতি কি আচরণ করে। তার তুলনায় ছোট মানের, অল্প শিক্ষিত বা একটু অভাব তাড়িত হয়ে বিপদে পড়ে, যদি কেহ আসে সে গাছের ন্যায় তাকে আদর সোহাগ দেখায় না, সে উদারতা মানবতা মনুষত্ব্য ভূলে যায় তাকে কোন কিছু দেয়া তো দূরের কথা বরং তার কোন সহায় সম্ভল থাকলে কি করে তা গ্রাস করা যায় ঐরকম পন্থী ফিকির আঠে অনেকেই। শুধু তাই নয় যদি বড় কোন কোম্পানী বা বিশেষ ক্ষমতাধর কোন ব্যক্তির পাশে কোন নগণ্য সাধারণ মানুষের কোন আ্যসেড বা সম্পদ থাকে তাহলে তার সন্তুষ্টির জন্য বিনা মূলে তাকে তা দিয়ে দিতে হয়,না হয় সর্বস্ব হারাতে হয় তখন আর কোন কিছু করার থাকে না। সেখানে প্রকৃতি নীরব। গাছ তার ফলমূল ঔষধি গুণাগুণ দিতে কাউকে ঠকায় না,সাদা কালো ধনী-দরিদ্র ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি সমতা ন্যায়-ইনসাফের শতভাগ বাস্তবায়নের পূর্ণতা। পৃথিবীর কোন গাছ হতে এমন কোন সংবাদ পাওয়া যায় না যে সমাজের ধনাঢ্য প্রভাবশালীদের প্রতি তাদের এক রকম আচরণ আর যাদের নাম দাম যশ খ্যাতী কম তাদের সাথে অন্যরকম আচরণ! ইহা কোথাও পাওয়া যায় নি আর হয়ত পাওয়া যাবে ও না।
কিন্তু আফসোস আশরাফুল মাখলুখাত মানুষ মানুষকে নানাভাবে ঠকায়! প্রতারণা করে হত্যা গুম রাহাজানি ছিনতাই থেকে শুরু করে এহেন অপকর্ম নাই যা মানুষ করে না,মানুষের দ্বারা হয়না। কেহ ক্ষমতার মোহে, কেহ কাড়িঁ কাড়িঁ সম্পদের লোভে,কেহ বা নাম প্রতিপত্তির মোহে পড়ে দেশ সমাজ কে বসবাসের অযোগ্য করে তুলে। কেন? কেন এমনটি হবে? মানুষ তো মানুষের জন্যই! আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এক শ্রেণীর মানুষ পেটের দায় আবর্জনার স্তুপে খাবার খোঁজে, ডাস্টবিনে খাবারের অন্বেষনে সারাদিন কিছু খোঁজে বেড়ায়!
অন্ধ বধির প্রতিবন্ধী নেহায়াত গরীব কিছু ফকির মিসকিন কে রাজধানী সহ বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রাস্তায় শুয়ে শুয়ে আহাজারী করতে দেখা যায় দু’চারটি পয়সার জন্য। তাদের কাকুতি মিনতিতে মনে হয় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়বে ! রাজধানীতে যানজটের অনেকগুলো কারনের মধ্যে ইহা অন্যতম। শুধু তাই নয় তারা যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ করার ধরুণ শহরে স্বাভাবিক চলাচলের পরিবেশ ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে পড়ছে কিন্তু এমনটা হলো কি করে!
গাছ যেমন পরগাছা কে আশ্রয় দিয়ে তার জীবন ধারনের সকল দায়ভার বহন করে প্রয়োজনীয় সকল কিছুর ব্যবস্থা করে তদ্রæপ মানুষ হয়ে কেন দু’চার জন অসহায় মানুষের দায়িত্ব সমাজের প্রভাবশালীরা নিতে পারবে না! প্রতিটি সমাজেই এমন কিছু বিত্তবান ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছে যারা ইচ্ছা করলেই এর অবসান করতে পারেন। এর জন্য দরকার একটু উদ্দ্যেগ একটু সাহসিকতা মানবতা মনুষত্বের জন্য কিছু করার মানসিকতা।
পৃথিবীর সকল সৃষ্টি মানুয়ের কল্যাণের জন্য,মানুষের হুকুম মানার জন্য তৈরী করা হয়েছে শুধুমাত্র জিন এবং ইনসান কে সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র ইলাহ কে ইলাহ হিসাবে মেনে নেওয়ার জন্য এবং তাঁর জমিনে সকল প্রকার তাগুতী শক্তিকে পরাভুত করে মহান মা’বুদের নিয়ম নীতি বিধি বিধান গুলো বাস্তবায়ন করার জন্য। সকল সৃষ্টিকূল সারাক্ষণ মহান রবের হকুম মেনে চলছে, যিকির করছে যদিও সকল সৃষ্টির ভাষা মানুষের জানা নেই ।
খড়া,অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় ভূমিকম্প বন্যা এসব হতে গাছ পরিবেশকে রক্ষা করে। মানুষের বেচেঁ থাকার অন্যতম উপাদান অক্সিজেন,বাতাস-ছায়া,ফলমূল শাক-সবজি ইত্যাদি যা সবই গাছ হতে পাওয়া যায়। আসবাবপত্র,লঞ্চ,স্টিমার,অফিস ষ্টেশনারীতে রয়েছে গাছের অবদান। বর্তমান সভ্যতার যুগে আধুনিক বিশ^ নেটওর্য়াক ব্যতীত অচল,আর শক্ত মজবুত নেটওর্য়াকের জন্য গাছের বিকল্প আর কিছু নেই। ফলমূল লতা-পাতা, শাক-সবজি মানুষের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য্য এসব কিছু গাছ হতে পাওয়া যায়। যান-বাহন ব্যতীত মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন অচল, যানবাহনের চাকা গাছের অবদান।
পৃথিবীর প্রায় দেশেই এখন ও এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা লাকড়ী দ্বারা রান্না বান্নার কাজ করেন আর গাছ ছাড়া কোন লাকড়ী আশা করা যায় না। হাঁস মুরগী ছাগল-ভেড়া গরু মহিষ মানুষের জীবনের চালিকা শক্তি যাদের খাবারের প্রধান উপাদান হচ্ছে লতা-পাতা ফল মূলের খোসা গাছের পাতা ইত্যাদি। শুধু এসবের মাঝেই গাছের কার্যক্রম শেষ নয়। সর্ব্বোপরি গাছ,লতা-পাতা সার্বক্ষণিক মহান মা’বুদের তাসবিহ মহিমা গুণ কীর্তণ করে যদিও তাদের ভাষা মানুষের জানা নেই । আল্লাহ তা’য়ালা বলেন “সৃষ্টিলোকে কোন একটি জিনিস এমন নেই যা তাঁর প্রশংসা,পবিত্রতা ও মাহাত্ম ঘোষণা করে না কিন্তু তাদের এ পবিত্রতা মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পারোনা। সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত (৪৪)
পৃথিবীর আদি মানুষ প্রথম নবী মহা মানব হযরত আদম (আ:) দুনিয়াতে আগমনের সূত্রপাত গাছ কে কেন্দ্র করে,একটি গাছই ছিল তাঁর পরীক্ষার প্রধান উপাদান। গাছের ছাল লতা-পাতা দ্বারাই তিনি প্রথমে লজ্জা নিবারণ করে দুনিয়াতে আগমন করে ছিলেন।জগৎ বিখ্যাত পৃথিবীর প্রথম ঐতিহাসিক সন্ধি হুদায়বিয়া নামক স্থানে মহানবী (সা:)-এর উপস্থিতিতে বাবলা গাছের নীচে সংগঠিত হয়েছে। শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবনেই গাছের প্রয়োজনীয়তা শেষ নয় পরপারের যাত্রা পথের প্রথম সোপান কবর,সেখানে ও গাছের প্রয়োজন,গাছ ব্যতীত ঐ পথের সরঞ্জাম সম্পন্ন হয় না কবরে বাঁশের ছাউনী ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র অবলম্বন।
শুধুমাত্র মানুষের অর্থ স্বাস্থ্য সুন্দর পরিবেশ কায়েম করাই গাছের কাজ নয়। পশু-পাখি, জীব-জানোয়ার কীট-পতঙ্গ সকলের প্রতি গাছের অসীম করুণা। বিশ^ সেরা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের উস্তাদ মহামানব আমাদের রাসুলুুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যদি কোন মুসলমান কোন বৃক্ষ রোপন করে অতঃপর ইহা হতে কোন মানুষ,জীব জানোয়ার কীট-প্রতঙ্গ এর কোন অংশ খায় অথবা এর দ্বারা উপকৃত হয় তাহলে বৃক্ষরোপন কারীর জন্য তা সদকাহ হিসাবে কবুল করা হয়। মনে করুন কোন এক ব্যক্তি অসুস্থ,ডাক্তার তাকে একাধারে তিনমাস বেশী বেশী ডাবের পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন কিন্তু তার কোন ডাব গাছ নেই এই ক্ষেত্রে বাজার হতে যদিও টাকা দিয়ে ডাব ক্রয় করে আনতে হচ্ছে তথাপি গাছ রুপনকারী অতিরিক্ত একটি ছওয়াব পাবে গাছ রুপণ করার কারণে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ