Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিন -জাতিসংঘে জোর দাবি

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২৫ এএম

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সবকিছু ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা প্রশ্নটি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান জোর দাবি তুলেছেন পৃথিবীর সবথেকে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতের। সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘকে জোরালো পদক্ষেপের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান এবং তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম-প্রধান দেশ রাখাইনের সঙ্কট উত্তোরণে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহŸান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এই সঙ্কট নিরসনে বেশকিছু বৈঠক করা হয়েছে। তবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া মিয়ানমারের প্রতিনিধি সু চির বক্তব্যেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ আগস্ট রাতে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন করে দমন অভিযানে নামে। সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানে গত প্রায় এক মাসে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ এবং গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ‘বলিষ্ঠ ও দ্রæত’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বক্তব্যে পেন্স বলেন ‘এই সঙ্কটের অবসান এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এই প্রয়োজনের সময় তাদের সহায়তা ও তাদের মাঝে আশা জাগাতে বলিষ্ঠ ও ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি’। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ নৃশংসতা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন পেন্স। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধএবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে আহŸান পুনর্ব্যক্ত করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মঙ্গলবারের ভাষণে রাখাইন অঞ্চলে হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের শাস্তির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন সু চি। সব পক্ষের নিরাপত্তার পাশাপাশি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সেখানকার রোহিঙ্গাদের নামোল্লেখ না করে ওই ডি-ফ্যাক্টো নেতা বলেন, ‘বেশ কিছু মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে- এ ধরনের খবর শুনে আমরা উদ্বিগ্ন।’ আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের রাখাইন পর্যবেক্ষণে মিয়ানমার ভীত নয় বলে উল্লেখ করে সু চি বলেন, আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তার সরকার কাজ করবে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশন চলাকালে মূল আলোচনার বাইরে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বুধবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে তুরস্কসহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিতের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন তারা। আলোচনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রাখাইন পরিস্থিতিকে সিরিয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। সেখানে চলমান জাতিগত নিধন বন্ধে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ সৃষ্টির আহŸান জানান তিনি।
এর আগে যুক্তরাজ্যের ভাইস প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন রাখাইনের সঙ্কট উত্তোরণে বেশকিছু বৈঠক করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুয়েতেরেজ মিয়ানমারে চলমান সঙ্কটকে এই বছরের শীর্ষতম সঙ্কট বলে আখ্যা দেন।
তবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থায়ো রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। জাতিসংঘ ভাষণে রোহিঙ্গাদেরকে তিনি ‘মুসলিম’ হিসেবে তুলে ধরেন। সু চির মতো করেই দাবি করেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি অজ্ঞাত।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে এগিয়ে আসতে সউদী আরবের আহŸান
মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি সউদী আরবের প্রধান উদ্বেগের। রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিত জাতিগতভাবে নিধন থামাতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত। বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৬তম অধিবেশনের আগে দেওয়া ভাষণে সউদী আরবের পক্ষ থেকে এই আহŸান জানানো হয়েছে।
অধিবেশনে সউদী আরবের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিয়োজিত দেশটির দূত আব্দুল আজিজ বিন মোহাম্মেদ আল-ওয়াসেল। মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে মিয়ানমারে স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
রোহিঙ্গাদের সা¤প্রতিক সহিংসতা নিন্দা জানিয়ে সউদী দূত বলেন, মিয়ানমার সরকার সহিংসতা কবলিত অঞ্চলে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনকে বাধা দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। এই কমিশন রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখত।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইনে মানবিক ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি না দেওয়ারও নিন্দা করা সউদী আরবের পক্ষ থেকে।
সউদী দূত উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টি চিহ্নিত করা উচিত। একই সঙ্গে ধর্ম, বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষ বৈষম্যহীন মানবাধিকার রক্ষায় মিয়ানমার যাতে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এদিকে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ১২২ কোটি ৯৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সউদী বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ। সূত্র : আরব নিউজ ও বিটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ