Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘ওদের পেটে রাক্ষুসে ক্ষুধা’

প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার : ১১ সন্তানের মা মোছাঃ সফুরা খাতুন। থাকেন নাইক্ষ্যংছড়ির কাঁটাতার সংলগ্ন ঘুমধুম শরণার্থী শিবিরে। ত্রিপল ও বাঁশের তৈরি সারি সারি ঘুপড়ি ঘর। সারির প্রথম খুপড়ি তথা তাবুর ভিতরে কোন্দনরত শিশুরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে। অসহায় মা ধমকাচ্ছেন। মা বোঝাচ্ছে সন্ধ্যা হোক খাবার দেব। ক্রন্দনরত শিশুরা মায়ের ধমক গ্রাহ্য করছে না। মায়ের ইচ্ছে আছে কিন্তু সমর্থ নেই। জানতে চাইলে সফুর বেগম সাংবাদিকদের সামনে দুঃখের ঝাপি যেন খুলে দেয়ার ফুসরত পান। বললেন, ‘ওদের পেটে যেন রাক্ষুসে ক্ষুধা। খাইতে না পারলেই খালি ভ্যা ভ্যা করে কাঁন্দে। আমি মা। ছেলেমেয়েদের খেতে দিতে পারলে আমি কি আর বসে থাকি!’ স্বামীকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। ১১ সন্তান নিয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে তিনি জীবনের ঝুকি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। সফুরার বাড়ি রাখাইনের মংডুর হাইস্যা পাড়ায়। ১১ সন্তানের জননী সফুরার বড় সন্তানের বয়স ১৪ আর কোলের শিশুর বয়স এক বছর। তিন কেজি চাল পেয়েছেন। সেই চাল দু’দিন খেতে হবে। নুন দিয়ে এক বেলা সেদ্ধ ভাত খেয়ে দুঘন্টা পরই বাচ্চারা ভাতের জন্য কাঁদতে থাকে। ত্রাণের খিচুড়ি কোনো দিন পেলে তা দিয়েই দিন পার করে দেয়।
সহায়-সম্ভলহীন সফুরার সংসারে সবকিছুই ছিল। স্বামী কাজ করতো; সংসারে তেমন অভাব ছিল না। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাড়িঘর জ্বলিয়ে দেয়ার পর তার স্বামীকে হত্যা করেছে। চোখের সামনে স্বামীকে হত্যার দৃশ্য দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সফুরা। পাশের বাড়ির লোকজনের পরামর্শে তাদের সঙ্গে পরের দিন ভোরে সীমান্তের পথে পা বাড়ান। ৫ দিন পায়ে হাটার পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে খুপড়ি ঘরে আশ্রয় পান। শুধু সফুরা নয়; হাজার হাজার সফুরা শরণার্থী ক্যাম্পে এই ভাবে মানবেতন জীবন যাপন করছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে জীবন বাঁচাতে শ্রোতের মতো যারা বাংলাদেশের আসেন সফুরা তাদের একজন। শরণার্থী ক্যাম্পে দেশি বিদেশী সাহায্য সংস্থা খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন না। আর অনেকেই প্রচুর ত্রাণ পাচ্ছেন। তবে সে সব সাংবাদিক সরেজমিন টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলো ঘরেছেন তাদের মতে থাকার কষ্টের পাশাপাশি খাদ্যেরও কষ্টে আছেন রোহিঙ্গারা। বিশেষ করে যে পরিবারে ছোট ছোট সন্তান বেশি তাদের কষ্টের শেষ নেই। কারণ ত্রাণ দেয়া হয় পরিবার গুনে। অথচ যে পরিবারে সদস্য বেশি তাদের সীমিত ত্রাণে পেট ভরে না।



 

Show all comments
  • মোঃ আব্দুল গাফফার ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৯ পিএম says : 0
    এটা ঠিক নয়, ত্রাণ সংখ্যানুপাতে দেয়া দরকার। ত্রাণ দিয়েও যদি একটা পরিবারের ক্রন্দন না থামে তাহলে সেটা কি ত্রাণ হ’ল?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ