Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এমএনপি লাইসেন্স পাচ্ছে ইনফোজিলিয়ন বিটি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম

ফারুক হোসাইন : | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নম্বর ঠিকে রেখেই অপারেটর বদলের সুযোগ তৈরির জন্য মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবার লাইসেন্স পাচ্ছে ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম। এমএনপি লাইসেন্স প্রদানের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) গঠিত মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স প্রদানের জন্য সুপারিশ করেছে কমিশন। বিটিআরসি লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশসহ প্রস্তাবনা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। তবে ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়ামকে লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশ করা এবং কমিশন সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কারণে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বিশেষ করে ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম অংশীদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন হোসাফ গ্রæপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মাবরুর হোসেন। মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত থাকায় তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এমএনপি লাইসেন্স প্রদানের জন্য সুপারিশসহ যে প্রস্তাব ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়েছে তা অনুমোদন হয়নি। কমিশনের তিন জন কমিশনার দেশের বাইরে থাকায় কমিশন সভার কোরাম সঙ্কট রয়েছে। জানতে চাইলে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক বলেন, মূল্যায়ন কমিটির স্কোরিং অনুযায়ি লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে কমিশন সভার অনুমোদনের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সাথে হোসাফ গ্রæপের কোন সম্পর্ক নেই। দুটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পৃথক। এছাড়া ইনফোজিলিয়ন একটি বিদেশি জয়েন্টভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান।
এর আগে অপারেটর নিয়োগে নিলামে যোগ্য ৫ প্রতিষ্ঠানের নাম জানায় বিটিআরসি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণটেক মিডিয়াফোন লিমিটেড (সহযোগী প্রতিষ্ঠান লিথুনিয়ার মিডিয়াফোন), রিভ নাম্বার লিমিটেড (সহযোগী প্রতিষ্ঠান পোল্যান্ডের টিফোরবি এসপি জেড ও ও), ব্রাজিল বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম (সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্রাজিলের ক্লিয়ার টেক), রয়েল গ্রীন লিমিটেড (সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিশরের গিজা সিস্টেম), ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড (সহযোগী প্রতিষ্ঠান ¯েøাভেনিয়ার টেলিটেক ডি ও ও)। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আবেদন পাওয়ার পর তা মূল্যায়নের জন্য বিটিআরসি কমিশনের ১১ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং (এলএল) বিভাগের কমিশনার মোঃ জহুরুল হক, সদস্য ছিলেন, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহা-পরিচালক এ কে এম শহীদুজ্জামান, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের পরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক এম এ তালেব হোসেন, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স (ইএন্ডও) বিভাগের পরিচালক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, এলএল বিভাগের উপ-পরিচালক সাজেদা পারভীন, সিনিয়র সহকারি পরিচালক মোঃ রাইসুল ইসলাম, এস এম তাইফুর রহমান, এস এম গোলাম সরোয়ার, সজিব কুমার সিংহ, তৌহিদ হোসেন।
এমএনপি লাইসেন্সের জন্য আবেদন পাওয়ার পর বিটিআরসি তা এমএনপি লাইসেন্স মূল্যায়ন কমিটির কাছে হস্তান্তর করে। কমিটি আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য ও কাগজপত্র বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করে। মূল্যায়ন শেষে কমিটি প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে নম্বর প্রদান করে। প্রদত্ত নম্বরের বিবেচনায় সর্বাধিক ৯২ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটি ¯েøাভেনিয়ার টেলিটেক ডি ও ও এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছে (প্রতিষ্ঠানে তার প্রায় ২৫ শতাংশ শেয়ারও রয়েছে) মাবরুর হোসেন। তার বাবা হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হেসেন। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের জড়িত থাকায় তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপরে ৮৭ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে গ্রামীণটেক মিডিয়াফোন লিমিটেড, ৮৪ নম্বর পেয়ে তৃতীয় ব্রাজিল বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম, ৮২ নম্বর পেয়ে চতুর্থ রিভ নাম্বার লিমিটেড এবং ৫৩ নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েল গ্রীন লিমিটেড।
বিটিআরসি এক উর্ধবতন কর্মকর্তা জানান, নিলামে আগ্রহ প্রকাশ করে ৬টি আবেদন সংগ্রহ করলেও ৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দিয়েছিল। নিলাম প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর লাইসেন্স হস্তান্তর করে এ বছর সেবা চালু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন। সেবায় সন্তুষ্ট না হলেও এখন অনেকে নম্বর পরিবর্তনের ঝক্কিতে যেতে চান না বলে অপারেটর বদলান না। এমএনপি চালু হলে তারা নম্বর ঠিক রেখেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বহু প্রতীক্ষিত এই সুযোগ তৈরির জন্য গত ২ ডিসেম্বর এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের কাজ কারা পাবে, সেই প্রক্রিয়া ‘স্বচ্ছ’ করতে কয়েকটি মূল্যায়ন মানদন্ড যুক্ত করে গত জানুয়ারিতে এমএনপি নীতিমালার সংশোধিত খসড়া চূড়ান্ত করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর পর মে মাসে তা চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিতে পারবে। একবার এমএনপি সুবিধা নেওয়ার পর গ্রাহক আবার নতুন কোনো অপারেটরে যেতে চাইলে তাকে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি পরিষেবা চালু রয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়ায় আবেদন ফি এক লাখ টাকা, বিড আর্নেস্ট মানি ১০ লাখ টাকা, নিলামের ভিত্তি মূল্য এক কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া বার্ষিক লাইসেন্স ফি হিসেবে ২০ লাখ টাকা, রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ প্রথম বছর শূন্য শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে এই লাইসেন্স দেওয়া হবে জানিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেছিলেন, এর মেয়াদ হবে ১৫ বছর। পরে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।
লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা: বাংলাদেশে বসবাসকারি যে কোনো ব্যক্তি বা প্রোপাইটরশিপ বা পার্টনারশিপ কোম্পানি এবং আরজেএসসির অন্তর্ভুক্ত যে কোনো কোম্পানি। বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বা প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারী যৌথভাবে এ লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবে। তবে এককভাবে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবে না। বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী বা প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যৌথ আবেদনের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীর মূলধনের অনুপাত ৫১ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। প্রবাসী বাংলাদেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীকে তাদের মালিকানার অংশ সরাসরি বিদেশি মুদ্রায় বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবে না। বাংলাদেশে সেলুলার মোবাইল ফোন লাইসেন্সধারী কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা তাদের মালিকানা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমএনপি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে না। আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এ কাজে অন্তত তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ন্যূনতম এক কোটি গ্রাহককে সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তাদের। কমিশনের লাইসেন্সধারী যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কমিশনের পাওনা বকেয়া রেখেছে, তারাও আবেদন করার যোগ্য হবে না।
রোলআউট টার্গেট: লাইসেন্স পাওয়ার পর ১৮০ দিনের মধ্যে দেশের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর এক শতাংশকে, এক বছরের মধ্যে পাঁচ শতাংশকে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে দশ শতাংশকে ‘পোর্টিং ও রাউটিং’ সেবা দিতে হবে। ১৮০ দিনের মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে জমা রাখা ব্যাংক গ্যারান্টি থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন কেটে নেবে। নির্ধারিত বাকি সময়ের মধ্যে রোলআউট টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হলে অবশিষ্ট ব্যাংক গ্যারান্টি কেটে নিয়ে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। লাইসেন্স দেওয়া হবে নিলামের পরবর্তী বিডারকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাইসেন্স


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ