Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিমানে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে

প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিঞা মুজিবুর রহমান
ব্রিটেন বাংলাদেশ বিমানের কার্গো পরিবহন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ হিসেবে দেশটি হজরত শাহ জালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঝুঁকিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরের রফতানি টার্মিনালে যারা কাজ করে তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত। নামমাত্র স্ক্যানিং করেই তারা টার্মিনালে ঢুকে পড়ে এবং যখন-তখন যতোবার খুশি বাইরে যাতায়াত করে। তারা যে পণ্যের সঙ্গে বোমা বা অন্য কোনো বিস্ফোরক এবং ধ্বংসাত্মক কিছু পাঠাবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তেমন ক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষেরও করার কিছু থাকবে না। একই কারণে অনেকদিন ধরেই ব্রিটেন বিমান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে এসেছে। সবশেষে চলতি মাস মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেছে, এর মধ্যে টার্মিনালের বহিরাগতদের বিদায় করে নিজস্ব কর্মচারী নিযুক্তি না দেয়া হলে দেশটি বাংলাদেশ বিমানকে কার্গো পরিবহন করতে দেবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে বিমানযোগে কোনো পণ্য ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারবে না। উল্লেখ্য, একই কথা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য সকল দেশও জানিয়ে দিয়েছে। এসব দেশও মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। উল্লেখ্য, তিন মাস আগে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রথম চাপিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই থেকে দেশটিতে বাংলাদেশ বিমানযোগে কোনো পণ্য প্রবেশ করতে পারছে না। বহু অনুরোধ জানানো এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানিকারকদের প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। একযোগে বহির্বিশ্বে ক্ষুণœ হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা। ব্যবসা-বাণিজ্যেও বিপুল ক্ষতি হচ্ছে দেশের।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিমানের কার্গো পরিবহনের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিকর তো বটেই, দেশের ভাবমর্যাদার জন্যও অত্যন্ত লজ্জাস্কর। অথচ বিষয়টি এত জটিল হয়ে ওঠার কোনো কারণ ছিল না। বিমান কর্তৃপক্ষ যদি প্রথম থেকেই বহিরাগতদের বিদায় করে কার্গো টার্মিনালে নিজস্ব জনবল বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতেন তাহলে এমনকি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অজুহাত জুটতো না। কথাটা বলার কারণ, পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বহিরাগতদের ব্যাপারে কোনো দেশের অভিযোগই অসত্য বা অমূলক নয়। আসলেও জনাকয়েক নিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া টার্মিনালে কর্মরতরা সবাই বহিরাগত। তারা যখন টার্মিনালে প্রবেশ করে তখন স্ক্যানিং-এর নামে লোক দেখানো সার্চ বা অনুসন্ধান করা হয়। এরপর তাদের প্রায় সকলেই দফায় দফায় বাইরে যাতায়াত করে। অনেকে নানা পণ্যও বহন করে। কিন্তু কোনোবারই আর স্ক্যানিং বা সার্চ করা হয় না। এর ফলে তাদের পক্ষে বিস্ফোরক বা অন্য যে কোনো ধ্বংসাত্মক বস্তু পাঠানোর সুযোগ তৈরি রয়েছে। তারা যে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের কাজ করেনি তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিষয়টি বিভিন্ন দেশ অবশ্যই লক্ষ করেছে আর সে কারণেই দেশগুলো বিমান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে। নিজস্ব জনবল নিয়োগ দেয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সরকারের কানেও পানি ঢোকেনি। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে অন্য একটি খবরে। জানা গেছে, মাস কয়েক আগে বিমান বন্দরের কয়েকটি বিভাগে আড়াইশ’র বেশি কর্মচারীর নিযুক্তি দেয়া হলেও প্রশ্নসাপেক্ষ কারণে কর্তৃপক্ষ টার্মিনালে একজনকেও নিযুক্তি দেয়নি। মূলত সেজন্যই পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আমরা মনে করি, হজরত শাহ জালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালকেন্দ্রিক সমস্যার আশু সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এর মধ্যে দেশের ভাবমর্যাদার প্রশ্ন তো রয়েছেই, সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এসেছে অর্থনৈতিক স্বার্থ। কারণ, শুধু অস্ট্রেলিয়ায় পণ্য পাঠাতে না পারার কারণেই প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে রফতানিকারকদের। এর সঙ্গে যদি ব্রিটেন এবং তার পর পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো যুক্ত হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সেই সাথে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্প। ওদিকে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতিও কল্পনার সীমা ছাড়িয় যাবে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি কার্গোর মাধ্যমেই রফতানি করা হয়। অর্থাৎ কার্গো নিষিদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি হবে সর্বাত্মক। এজন্যই নিজস্ব জনবল নিযুক্তির এবং বহিরাগতদের বিদায় করার ব্যবস্থাও নেয়া দরকার জরুরি ভিত্তিতে। ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়াসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে অবশ্যই।
ষ লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মিডিয়া অ্যান্ড ম্যানেজম্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমানে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে
আরও পড়ুন