পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবাসী আয়ে মন্দা কাটছেই না। ঈদুল আযহার কারণে আগস্টে রেমিট্যান্স বাড়লেও সেপ্টেম্বর মাসে আবার কমেছে। এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার; যা গত ৭ বছরের মধ্যে একক মাসে সর্বনিম্ন। এর আগে সবচেয়ে কম ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে গত ২০১০-১১ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে। এভাবে প্রবাসী আয় কমে যাওয়া অব্যাহত থাকলে সামগ্রিক অর্থনীতিতেই এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। তাদের মতে, এখনো বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস এই প্রবাসী আয়। এই আয় মোট ঋণ ও বিদেশি বিনিয়োগের চেয়েও বেশি। তা ছাড়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের পল্লি অঞ্চলের বিশালসংখ্যক পরিবার এই প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকারদের পরামর্শসহ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ও গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক অবৈধভাবে দেশে অর্থ প্রেরণকারী কিছু মোবাইল অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করার পর কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তারপরও এসব পদক্ষেপ কোন কাজেই আসছে না।
সূত্র মতে, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রাপ্তি কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এখন একটি বৈশ্বিক প্রবণতা। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স কমেছিল ১ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৪২৯ বিলিয়ন বা ৪২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাপী গত দুই বছর ধরেই রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার এই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের দাম হ্রাস, ইউরো এবং পাউন্ডের বিনিময় মূল্য পতন এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের কারণে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। গত অর্থবছরেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে। সূত্র মতে, প্রবাসী আয়ে গত অর্থবছরজুড়ে মন্দাভাব থাকায় প্রথম থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। আর প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে নানান উদ্যোগও নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু উদ্যোগ কাজে আসছে না। প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও আগস্টে ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। তবে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ এসেছে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। মূলত ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুসহ বাড়তি কেনাকাটার কারণে আগস্ট মাসে বেশি রেমিট্যান্স আসে। এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। সে হিসেবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১৪ কোটি ২১ লাখ ডলার বা প্রায় ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় খাতের ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এ মাসে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংক দুটির মাধ্যমে এসেছে ৮৫ লাখ ডলার। তথ্যে আরও দেখা যায়, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সেপ্টেম্বর মাসে ৬২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা এর আগের মাসে ছিল ৮৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯৫ লাখ ডলার।
এদিকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ‘হালনাগাদ উন্নয়ন’ নামে সেপ্টেম্বর সংখ্যার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব দেশে প্রবাসী আয় কমলেও এর গভীরতা ও ধারাবাহিকতার দিক থেকে পরিস্থিতি খারাপ বেশি বাংলাদেশ ও ভারতের। অর্থাৎ এই দেশ দুটিতে প্রবাসী আয় বেশি কমেছে এবং তা ধারাবাহিকভাবেই কমছে। বাংলাদেশ ও অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পায় মূলত মধ্য উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে। এসব দেশের অর্থনীতির আয়ের মূল উৎস জ্বালানি তেল। আর এই জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণেই প্রবাসী আয়ে ধাক্কা লেগেছে। এছাড়া দেশগুলোতে থাকা মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। আর এরই প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় প্রবাহে। তবে পাশ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার প্রবাসী আয়ের কমে যাওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশের মতো এতটা প্রকট নয়। সূত্র মতে, বাংলাদেশ প্রবাসী আয়ের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। মোট প্রবাসী আয়ের ৬০ শতাংশই আসে এসব দেশ থেকে। একমাত্র কাতার ছাড়া বাকি সব উপসাগরীয় দেশ থেকেই প্রবাসী আয় হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও কুয়েত থেকে প্রবাসী আয় আসা কমেছে সবচেয়ে বেশি। যদিও আয় কমলেও প্রবাসে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশি যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। এ সময় ৭ লাখ ৫১ হাজার ৪১০ জন উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজ করতে গেছেন। এই সংখ্যা গত অর্থবছরের মোট জনশক্তি রপ্তানির ৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি গেছে সউদী আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। এত মানুষ গেলেও বিপরীতে কত মানুষ একই সময়ে ফিরে এসেছেন, তার কোনো নির্ভরযোগ্য উপাত্ত নেই, উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, নতুন যাঁরা গেছেন, তাঁদের প্রতি চারজনের একজন নারী। তাঁরা অত্যন্ত কম বেতনে যাচ্ছেন। এটিও প্রবাসী আয় কমার আরেকটি কারণ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কারণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে অর্থ পাঠানোর অনানুষ্ঠানিক পথ ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তথ্য অনুযায়ী, পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় কমেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এদিকে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে নানা ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিরই ব্যবহার বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সমীক্ষায়ও দেখা গেছে, ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং ও হুন্ডির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এর একটি কারণ হতে পারে বিনিময় হারের পার্থক্য, দ্রæত অর্থ পাঠানোর সুবিধা ও কম খরচ।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, হুন্ডির কারণেই মূলত রেমিট্যান্স কমছে। আর ব্যাংকের সঙ্গে খোলা বাজারে ডলারের দামের পার্থক্য অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডির দিকে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে আসার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে বিদেশে আছেন এবং অল্প পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংকে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভুয়া এজেন্ট সেজে যাতে কেউ এ কাজে সহযোগিতা করতে না পারে সে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর থেকে প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।