Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা আর কতকাল অবাসযোগ্য ও হতাশার নগরী হয়ে থাকবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একটি দেশের রাজধানীকে বলা হয় সৌল বা আত্মা। একে কেন্দ্র করেই দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি পরিচালিত হয়। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী। মানুষের হার্ট বা হৃৎপিন্ড যদি সুস্থ না থাকে, তবে তার শরীর-মন দুটোই খারাপ হয়ে যায়। আবার হার্ট দিয়েই মানুষের স্বভাব-চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। রাজধানীও তদ্রæপ। এর চেহারা ও বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায় দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি। রুচিরও পরিচয় বহন করে। ঢাকা শহরের চিত্র দেখলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশের সার্বিক চিত্রটি কি। কারণ ঢাকার মধ্যেই প্রতিফলিত হয় দেশের সকল সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র। অথচ বাস্তবে ঢাকার চেহারা দেখলে দেশের কী হালহকিকত তা বোঝার উপায় নেই। এমন অগোছালো এবং অনিয়মের শহর বিশ্বে খুব কম দেশেই রয়েছে। এখানে যেমন ক্ষমতাধরদের যেমন খুশি তেমন আচরণ দেখা যায়, তেমনি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছুটে আসা প্রান্তিক মানুষও এসে যেখানে সেখানে বাসা বেঁধে ফেলতে পারে। নিয়মের কোনো বালাই নেই। বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক একটা প্রবণতা হচ্ছে, ঢাকা হচ্ছে সব সুখের উৎস। এখানে বসবাস করতে পারলে সুখী না হয়ে উপায় নেই। অনেকের প্রত্যাশা, পুরো বাংলাদেশটা ঢাকা শহর হলে এর চেয়ে ভাল কিছু আর হতো না। এই যে ঢাকার প্রতি মানুষের অবারিত টান, ভালবাসা এবং ছুটে আসাÑএর কারণেই ঢাকা দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। রাজধানী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। এটি এখন মহাসমস্যার নগরীতে পরিণত হয়েছে।
দুই.
ঢাকা সমস্যার নগরী, এটা নতুন কিছু নয়। অনেক আগে থেকেই এ সমস্যার শুরু। এখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত এবং অপ্রতুল। যতই দিন যাচ্ছে, এর সমস্যা দ্রæত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এখন অচল এক শহরে পরিণত হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের কোনো পথই যেন খোলা নেই। ২০১৪ সালের দিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকার ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিশ্বব্যাপী শহরের উপর জরিপ করে ঢাকাকে বসবাসের সবচেয়ে ‘অযোগ্য’ শহর বলে চিহ্নিত করে। এর এক বছর পরই ‘অসভ্য’ নগরী হিসেবে ঘোষণা করে। সবচেয়ে দূষিত নগরী হিসেবেও ঘোষিত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যে নগরী সভ্যতার প্রতীক হয়ে উঠে, ঢাকা শহর সে পর্যায়ে উন্নীত হতে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকা শহর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা সভ্যতার পরিচয় দিতে পারেনি। তাদের চরম ব্যর্থতা রয়েছে। তা নাহলে অযোগ্য ও অসভ্য হিসেবে চিহ্নিত হবে কেন? এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা জিপজেটের করা এক প্রতিবেদনে ঢাকাকে এশিয়ার এক নম্বর ‘হতাশার শহর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ১৫০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৪৪। অর্থাৎ বিশ্বের অত্যন্ত নি¤œমানের শহরের তালিকায় ঢাকা ঠাঁই পেয়েছে। হতাশগ্রস্ত শহর বলার কারণগুলোর মধ্যে বিবেচনা করা হয়েছে, শহরের মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ট্র্যাফিক জ্যাম, একটি শহর কী পরিমাণ সূর্যালোক পায়, নাগরিকদের আর্থিক অবস্থা, বেকারত্ব, লৈঙ্গিক সমতা ইত্যাদি। অর্থাৎ এসব সূচকে ঢাকা একেবারে তলানিতে পড়ে রয়েছে। আমরা যদি শহরের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যর কথা বিবেচনা করি, তবে দেখব মানসিকভাবে সাধারণ মানুষ খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। এ শ্রেণীর মানুষ না পারছে ঢাকায় থাকতে, না পারছে ছাড়তে। এর কারণ ঢাকায় স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবনযাপন ব্যয় অত্যধিক। সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে এখানে বসবাস করা কঠিন। দিন দিন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, বাসা ভাড়া, পরিবহণ খরচ। স্বাস্থ্য সেবার খরচও অনেক বেশি। পাশাপাশি সন্তানের পড়ালেখার খরচ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতসব খরচ মিটিয়ে ঢাকায় বসবাসকারি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে স্বস্তিতে থাকা এক প্রকার অসম্ভব। এখানে কোনো কিছুর দাম কমে না। দিন দিন কেবল বাড়ে। আজ যে জিনিসের দাম এক টাকা। একদিন যেতে না যেতেই তা দুই টাকা হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির শহরের তালিকা যদি করা হয়, তবে ঢাকা যে বিশ্বের এক নম্বর স্থানে থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই। বলা যায়, ঢাকায় যেসব নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বসবাস করে, তারা এক প্রকার জিম্মিদশার মধ্যে পড়ে জীবনযাপন করছে। তাদের মধ্যে হতাশার শেষ নেই। এর কারণ হচ্ছে, তাদের আয় বাড়ে না। যেটুকু আয় বাড়ে তা জিনিসপত্রের দামের উর্ধগতি খেয়ে ফেলে। ফলে ঘাটতি থেকেই যায়। এ ঘাটতি নিয়েই তাদের সংসার চালাতে হয়, দুঃশ্চিন্তা ও হতাশার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। এ অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকার কথা নয়। ইদানিং কারো কারো মুখ থেকে শোনা যায়, রাজধানী সবার জন্য নয়। কথাটি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যেসব মানুষ এখানে বসবাস করছে, তাদের ক্ষেত্রে কথাটি চরম বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। জরিপ করলে দেখা যাবে, এ শ্রেণীর মানুষই সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে বসবাস করছে। সমস্যা হচ্ছে, যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসা এ মানুষগুলোর পক্ষে ঢাকা ছেড়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। অনিবার্যভাবেই তাদের কষ্ট স্বীকার করে থাকতে হচ্ছে। আবার সারা দেশ থেকে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকা ও কর্মসংস্থানের জন্যও মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। প্রতিদিন এই শহরে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রবেশ করছে। এদের প্রত্যেকের ধারণা, ঢাকা এলে কিছু না কিছু হবে। এদের বেশিরভাগ ঠাঁই নেয় ফুটপাত বা বস্তিতে। তাদের কেউ গৃহকর্মে নিয়োজিত হয়, কেউ পরিচিত কাউকে ধরে রিকসা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ঢাকায় এখন কত রিকসা চলাচল করে, তার সঠিক হিসাব সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে আছে কিনা সন্দেহ। বিশ্বের কোনো দেশের রাজধানীতে এমন দৃশ্য দেখা যায় নাÑএকইসঙ্গে সড়কে রিকসার মতো ধীরগতির ও ইঞ্জিন চালিত দ্রæতগামী যানবাহন চলাচল করতে। ঢাকার যানজটের জন্য এই রিকসাও বড় একটি কারণ।
তিন.
রাজধানীতে যানজটের কারণে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তার হিসাব বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিটা কত হয়, তার হিসাব পাওয়া যায় না। বলা হয়, যানজটের কারণে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। কর্মঘন্টা নষ্ট হয় ৮০ লাখ। তবে এর ফলে যে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধিত হয়, তার হিসাবটি যে অনেক বড়, তাতে সন্দেহ নেই। জীবনের চেয়ে তো মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। যানজটে পড়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে না পেরে কত রোগী মারা গেছে, তার হিসাব পাওয়া না গেলেও, এর ক্ষতি যে অপরিসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যানজট নিয়ে নগরবিদরা বহু বছর ধরেই কথা বলছেন। সমাধানেরও কথা বলেছেন। তাদের এসব কথা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। উদ্যোগের কথাও শোনা যায় না। ভাবা যায়, এ শহরে সড়কের পরিমাণ আয়তনের মাত্র ৬ থেকে ৭ ভাগ। অথচ থাকার কথা ২৫ ভাগ। এত অল্প সড়কেই প্রতিদিন চলছে লাখ লাখ যানবাহন। এর উপর প্রতিদিন নামছে দুই থেকে আড়াইশ’ নতুন গাড়ি। যদি বলা হয়, ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ একটি গ্যারেজ, তবে বেশি বলা হবে না। এখানে প্রতিদিন সড়কে যানবাহন ঘন্টার পর ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহরও বলা যায়। জনসংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ শহর এটি। এর জনসংখ্যা বর্তমানে কাগজে-কলমে ১ কোটি ৭০ লাখ। তবে সংখ্যাটি যে দুই কোটি হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। রাজধানী হিসেবে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের যে সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তা এখানে নেই বললেই চলে। একটি শহরের সুযোগ-সুবিধা বলতে সাধারণত রাস্তা-ঘাটে স্বচ্ছন্দে চলাফেরা, নাগরিক সুবিধাদি যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সহজলভ্যতা, নিরাপত্তার বিষয়গুলো সম্পৃক্ত। এসব মৌলিক বিষয়গুলো রাজধানীতে খুবই অপ্রতুল। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, রাজধানীকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করা। যেমন এর সম্প্রসারণ কেমন হবে, তার কোনো সঠিক পরিকল্পনা নেই। যে যেভাবে পারছে, তার মতো করে একে সম্প্রসারণ করছে। আমরা মাঝে মাঝে নগর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চমকপ্রদ কিছু পরিকল্পনার কথা শুনি। একবার শুনেছিলাম, তেজগাও এলাকাকে আমেরিকার ম্যানহাটনের মতো করে গড়ে তোলা হবে। সম্প্রতি শুনেছি, পুরনো ঢাকার বংশাল ও এর আশপাশের এলাকাকে অত্যাধুনিক করে সাজানো হবে। এসব সংবাদে আমরা পুলকিত হই। তবে স্বপ্নের মতো এসব পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়ন হবে বা আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, রাজধানীতে যার ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি, তার দখলেই সরকারি সম্পত্তি থাকে। এদের কবল থেকে এসব সম্পত্তি উদ্ধার করা যায় না, উদ্ধার করতে গেলেও ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই যে রাজধানীতে প্রায় ৪৬টি খাল ছিল, সেগুলো না থাকার কারণ দখল করে নেয়া। প্রভাবশালী মহল এসব খাল দখল করে নিজেদের করে নিয়েছে। অথচ এগুলোর মালিক সরকার। এসব খাল আর ফিরে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। খালগুলো যদি রক্ষা করা যেত, তবে আজকে সামান্য বৃষ্টিতে যে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, তা কখনোই থাকত না। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে দখলকৃত খাল উদ্ধার করার নির্দেশ দিতে শুনেছি। এখন দেখার বিষয়, এগুলো উদ্ধার হয় কিনা। তবে কাজটি সহজ নয়। এক্ষেত্রে কেবল সরকারের দৃঢ় সংকল্প এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রয়োগ হলেই সম্ভব। আমরা দেখেছি, ঢাকা উত্তরের মেয়র শত বাধা-বিপত্তির মাঝেও দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে বহু বছর ধরে দখলে থাকা তেজগাও ট্রাক স্ট্যান্ড উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। দখলকারীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখলেও, তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। এখন সেখানে চমৎকার সড়ক নির্মিত হয়েছে। পুরো এলাকাটি নান্দনিক রূপ লাভ করেছে। তিনি আরো একটি কাজ করেছেন, গাবতলিতে চিরাচরিত যে যানজট লেগে থাকত, তা সমাধানে ঐ এলাকায় যত্রতত্র গাড়ি থামানো এবং পার্কিং বন্ধ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ এলাকাটিকে গতিশীল করেছেন। এর ফলে এখানে খুব কম যানজট সৃষ্টি হয়। এ ধরনের এলাকাভিত্তিক উদ্যোগ যদি অন্যান্য কর্তৃপক্ষ নিত, তবে রাজধানীর এত করুণ দশা হতো না। রাজধানীর আরও অসংখ্য সমস্যার মধ্যে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ও আবর্জনা অন্যতম। একটি এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা সাধারণত ৩৫ ডেসিবল পর্যন্ত সহনীয়। এ মাত্রা ছাড়িয়ে তা গড়ে ৬০ ডেসিবল পর্যন্ত বিরাজমান। এতে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল এবং অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাজধানীর বাতাসের ঘনত্বও অনেক বেশি। বাতাসে ক্ষতিকর সিসা, কার্বণ ডাই অক্সাইড, কার্বণ মনোঅক্সাইডের হার সীমাছাড়া। এর ফলে বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়া যায় না। ভারি হয়ে উঠা বাতাসের কারণে নগরবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার এই ভারি বাতাসের সাথে যুক্ত হচ্ছে, প্রতিদিন উৎপাদিত বর্জ্যরে দুর্গন্ধ। এক হিসাবে দেখা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন সাড়ে ৭ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এই বিপুল বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হলেও, তা যথাযথভাবে অপসারণ করা হয় না। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে এমনকি প্রধান সড়কের উপর আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। বলা হচ্ছে, এসব বর্জ্য কাজে লাগিয়ে জৈব সার এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আমরা দুটি ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা শুনেছি। এ প্রকল্প কবে বাস্তবায়ন হবে তা অনিশ্চিত। তবে রাজধানীর এতসব সমস্যা, অসুবিধা এবং সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতার মাঝে নাগরিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকই তাদের পাওনা আদায় করে নিচ্ছে। এতে তাদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে।
চার.
রাজধানী সকলের জন্য নয়, এটা যেমন বাস্তবতার আলোকেই সত্য, তেমনি রাজধানীতে আসা এবং থাকার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, রাজধানী দুইটি হয় না এবং সকল সুযোগ-সুবিধা এখানেই সীমাবদ্ধ। এর ফলে সবারই লক্ষ্য থাকে রাজধানীমুখী হওয়া। যদি রাজধানীর মতো সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আরও বেশ কয়েকটি বড় শহর থাকত, তবে মানুষের রাজধানীমুখী হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যেত। ভারতে রাজধানী দিল্লীর মতো বেশ কয়েকটি বড় শহর রয়েছে। সেসব শহরে রাজধানীর মতোই সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আমাদের দেশেও রাজধানীর মতো সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য শহরে গড়ে তুলতে পারলে ঢাকার উপর থেকে নিশ্চিতভাবেই অনেক চাপ কমে যেত। মোট কথা, ঢাকাকে কুক্ষিগত অবস্থায় না রেখে এবং সব মনোযোগ না দিয়ে, এর মতো সুবিধাদি অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে দেয়া দরকার। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ভারমুক্ত করতে হবে। এটা সম্ভব যদি বিভাগীয় শহরগুলোকে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা যায়। চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রশাসনিক কর্মকাÐ ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা যদি লক্ষ্য করি তবে দেখব, ভারতে শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য মানুষ কেবল রাজধানী দিল্লী অভিমুখী হয় না। দিল্লীতে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তদ্রæপ বোম্বে, ব্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই, পুনে এমনকি কলকাতায়ও রয়েছে। কলকাতার মতো একটি রাজ্যের রাজধানী যদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সজ্জিত হতে পারে, তবে আমাদের দেশের রাজধানীকে কেন তা করা যাবে না? আমরা অর্থনীতিতে ক্রমেই উন্নতি করছি, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছিÑএসব কথা অহরহ বলা হচ্ছে, অথচ রাজধানী অচল ও অবাসযোগ্য হয়ে আছে। উন্নয়ন দেখানোর মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। বলা বাহুল্য, এখানে উন্নয়নের নামে বেশুমার অর্থ ব্যয় হয় ঠিকই, তবে এ অনুযায়ী উন্নয়ন দেখা যায় না। এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে! আমরা উন্নয়ন দেখানোর জন্য পদ্মা সেতুকে অনেকটা আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়েছি। এ সেতু না হলে যেন উন্নয়ন দেখানো সম্ভব নয়। তাই যত মনোযোগ এখানেই দিতে হবে। অথচ পদ্মা সেতুর চেয়ে রাজধানীর উন্নয়ন কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ সেতুর মতো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও সময় নির্দিষ্ট করে যদি রাজধানীর উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া যেতো, তবে নিশ্চয়ই ঢাকার আমূল পরিবর্তন হতো। ঢাকা বাসযোগ্য হয়ে উঠার সাথে সাথে আশার শহরে পরিণত হতো।
[email protected]



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৭:২৬ এএম says : 0
    বিনা কারনে যেন ঢাকার বাহির থেকে লোকজন ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপরেশনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmad Anam ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:০৯ এএম says : 0
    যতকাল দেশে ভাইরাস থাকবে...।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ