Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট ওয়েইন শহরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে উত্তেজনা

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ফোর্ড ওয়েইন এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মিয়ানমারের রাখাইনে বিভিন্ন সময় সহিংসতার মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন। গত কয়েক বছরে এখানে উল্লেখযোগ্য হারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। সেখানে বসবাসরত মিয়ানমারের অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা সেখানে রোহিঙ্গাদের চাইছে না। তাদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে রাখাইনের সহিংসতা শহরটিতেও শুরু হতে পারে। তবে শহরটির মেয়র জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাসহ যে কোনও স¤প্রদায়ের মানুষকে স্বাগত জানানো হবে।

ফোর্ট ওয়েইন এলাকায় সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে সিরীয় শরণার্থীদের সংখ্যাগত দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে রোহিঙ্গারা। এই মুহূর্তে সেখানে প্রায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার বাস করছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি বাস করছে শিকাগো ও মিলওয়াইকি শহরে। এই দুটি শহরে এখানকার চেয়ে অনেক বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
ফোর্ট ওয়েইন শহরে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার থাকলেও বার্মিজ স¤প্রদায় বিবেচনায় নিলে তাদের সংখ্যা অনেক কম। শহরটিতে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৬ হাজারের বেশি পরিবার বাস করছে।
ভয়েস অব আমেরিকার এক খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে রোহিঙ্গারা আলাদা ভাষা ও ধর্মের। যে ধর্মীয় সহিংসতায় মিয়ানমার ছেড়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে ফোর্ট ওয়েইনে আশ্রয় নিয়েছে, সেই সংঘাতের উত্তেজনা সেখানেও তাদের পিছু ছাড়ছে না।ফোর্ট ওয়েইনে বসবাসরত মিয়ানমারের চীন জাতিগোষ্ঠীর নেতা আব্রাহাম থাং। ১৯৯০ দশকের দিকে তিনি শহরটিতে এসেছিলেন। রোহিঙ্গাদের শহরটি আসা কেন তিনি অপছন্দ করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এদের বেশির ভাগ হচ্ছে মুসলিম। তাদের শরীরে মুসলমানের রক্ত, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টানের নয়। তারা অনেক খারাপ কাজ করেছে। তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং হিন্দুদের হত্যা করেছে। এটি ছিল রোহিঙ্গাদের বড় ভুল।
ফোর্ট ওয়েইনে রোহিঙ্গাদের বসবাস নিয়ে ভয়েস আমেরিকার মিয়ানমারের আদিবাসী খ্রিস্টান চার্চের যাজক থাং-ই শুধু কথা বলতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেন, তারা যে ধর্মে বিশ্বাস করে তা পালনের ক্ষেত্রে আমার কোনও আপত্তি নেই। আমার আপত্তি হলো উগ্রবাদে। বেশির ভাগ সন্ত্রাসীরা আসছে মুসলিম স¤প্রদায় থেকে। ব্যক্তিগতভাবে এটিই আমার বিবেচ্য বিষয়। আমার মত হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফোর্ট ওয়েইনে অবস্থান করতে না দেওয়াই ভালো।
মিয়ানমারের অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ফোর্ট ওয়েইনে রোহিঙ্গাদের স্থান দিতে আপত্তি জানালেও শহরটির মেয়র টম হেনরি ভিন্নমত পোষণ করেন। রোহিঙ্গাদের স্থান দিতে আপত্তির বিষয়কে তিনি দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, আমাদের সমাজে মিয়ানমারের যে কোনও মানুষকে আমি স্বাগত জানাবো।
ডেমোক্র্যাটিক নেতা হেনরি শহরটির আড়াই লাখ বাসিন্দাদের সঙ্গে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের একীভুতকরণের কাজ করে যাচ্ছেন।
হেনরি বলেন, যে কোনও নিপীড়িত স¤প্রদায়ের মানুষকে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে আমরা গর্ববোধ করি। তারা যদি আমেরিকার নাগরিক হতে চায় আমরা তাদের সহযোগিতা করব। রাখাইনে যে উত্তেজনা ও উদ্বেগের খবর পাচ্ছি তা আমাকে ব্যতিত করছে।
থাং বলেন, ভবিষ্যতে এখানে মিয়ানমারের মানুষ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে আমরা সংঘাত দেখতে পাব। যা শহরটির মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে না।
তবে মেয়র থাংয়ের মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন না। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এমনটি ঘটবে। আমাদের একটি নিরাপদ কমিউনিটি রয়েছে।
শহরটিতে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানিয়েছেন, তারা মনে করেন না মিয়ানমারের অন্য জাতিগোষ্ঠী তাদের আলাদা করে দেখছে বা নিপীড়ন করছে। এখানে বসবাস শুরু করার পর থেকে কেউই কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েননি। ফলে তারা মনে করেন শহরটিতে তাদের স্বাগত জানানো হয়েছে।
২০১৪ সালে মালয়েশিয়া হয়ে ফোর্ট ওয়েইনে গিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী বিবি আশা তাহির। তিনি জানান, এখন অনেক নিরাপদবোধ করছেন পরিবার নিয়ে। তবে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের জীবনযাপন পদ্ধতিতে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন তিনি। তবে একেবারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। বিবি আশা বলেন, ‘নিজেদের দেশেই আমরা শান্তিতে থাকতে পারিনি... এখানে কীভাবে আমরা শান্তি খুঁজে পাব।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ