Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে শায়েস্তা করতে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের নেপথ্যে দেশটির সেনাবাহিনীকেই মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এজন্য ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সেনাবাহিনীকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করছে তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার অবসান ঘটাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
২৫ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েকটি নিরাপত্তা চেকপোস্টে আরসার দাবিকৃত হামলার পর জোরদার হয় সেনাবাহিনীর কথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশন। এরপর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। কখনও মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দিয়েছে সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয়েছে তাদের গলা। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে কখনও কখনও। নারী ও কন্যা শিশুদের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে অমানুষিক যৌন নিপীড়ন। তবে এইসব তথ্য পেতে রাখাইনে অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ্বের সোচ্চার মানুষ এই সহিংসতা বন্ধের বার বার দাবি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি মিয়ানমার। তাই দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পশ্চিমা বিশ্ব।
এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালই একই অভিযোগ এনেছে। সংস্থাগুলো স্যাটেলাইট ইমেজ আর ভিডিওচিত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপকর্মের নজির তুলে এনেছে। রয়টার্স তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছে, এমন অবস্থায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকেই রাখাইনের জাতিগত নিধন পরিকল্পনার মূল অনুঘটক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। সেই পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়াশিংটন, ইয়াঙ্গুন ও ইউরোপের কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিককে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলছে, ‘কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকগুলো পথের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারেই একমত হয়েছেন তারা’। রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস এ জন্য আরও কিছু দিন সময় নিতে পারে।
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৫ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পূর্বের চার লাখের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সবমিলে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন করে সেনা অভিযান জোরদার হওয়ায় আরও ৩ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১২ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন অবস্থায় রাখাইনে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা বাড়ানোরও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ইয়াঙ্গুনভিত্তিক কূটনীতিকরা রয়টার্সকে বলেছেন, আলোচনার দ্বার খোলা রাখার জন্য প্রথম পর্যায়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রতীকী হতে পারে। উদাহরণ হাজির করতে গিয়ে তারা ইঙ্গিত দেন, গত বছরের ব্রাসেলস, বার্লিন ও ভিয়েনা সফর করা সেনাপ্রধানের পরবর্তী ইউরোপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। ইয়াঙ্গুনে নিয়োজিত এক জ্যেষ্ঠ ইউরোপিয়ান কূটনীতিক বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এই সঙ্কট মোকাবেলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তারা এ বিষয়ে একমত যে, সমস্যার মূলে সেনাবাহিনী এবং বিশেষত কমান্ডার ইন চিফ, যেকোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপে যাকে টার্গেট করা দরকার।
মিয়ানমার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা সম্পর্কে অবগত যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লাইংসহ বেশ কয়েকজন জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ এবং এদের সঙ্গে মার্কিনিদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে দেশ শাসন থেকে সরে আসার পর ২০১২ সালে মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ইইউ। নব্বইয়ের দশক থেকে চলে আসা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এখনও রয়েছে। স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর থেকে বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা রেখেছে। তবে আবারও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বৃহৎ পরিসরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে প্রশাসনে তেমন সমর্থন নেই। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক মাস আগেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আলোচনায় ছিল না। তবে ঘরবাড়ি ছেড়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের চাপে ফেলেছে। নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনায় এই চাপ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে রয়টার্স।



 

Show all comments
  • তানজীম ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ২:৪১ এএম says : 1
    সব মুসলমান মারার পর তারা ব্যবস্থা নিবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Aktarujjaman aktar anisa. ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১০:৩৩ এএম says : 3
    বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্র গুলো এভাবে তাকিয়ে থাকবে*!(*না;প্রতিবাদ করবে*???*)
    Total Reply(0) Reply
  • Farooq ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৩ পিএম says : 0
    যেই দিন করে .... তার পর বলো
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mizan Rahman ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৪ পিএম says : 0
    দ্রুত এ সিদ্যান্তের বাস্তবায়ন হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Nirob Prodhan ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৫ পিএম says : 0
    ভালো সংবাদ ..
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Abdur Shukkur ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৫ পিএম says : 0
    ফিলিস্তিন,সিরিয়ার মত হবে,রেজাল্ট ০০০০।
    Total Reply(0) Reply
  • Sahadat Hossain ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৫ পিএম says : 1
    কখন করবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kayes Hossain ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৬ পিএম says : 0
    কে যে আসবে বুজা মুসকিল
    Total Reply(0) Reply
  • Moniruz Zaman ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:৪৮ পিএম says : 0
    বিবেচনা করতে করতে আরাকানী সাফ হয়েজাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rafi Mansur ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:৫৭ পিএম says : 0
    কি অবাক কান্ড। যে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কে আমরা শত্রু ভাবি তারা আজ বাংলাদেশকে সহযোগীতা করছে। আর যাদের আমরা বন্ধু ভাবি (ভারত,চীন,রাশিয়া) তারা আজ বাংলাদেশের সাথে নেই।কথায় বলে বিপদে বন্ধুর পরিচয়। আশা করি বাংলাদেশ বন্ধু চিনেই বাকি পথ চলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • aziz hassan ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ১:০৫ পিএম says : 0
    সব মুসলমান মারার পর তারা ব্যবস্থা নিবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • kamal hosen ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:২৭ পিএম says : 0
    আশ্চর্যই হতে হয় যারা আমাদের বন্ধুদেশ তারা তামাশা দেখছে এমনই মনে হয়। আর এ্যামারিকা ইউরোপ যথেষ্টই বাস্তবানুগ পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিচিত্র পৃথিবী
    Total Reply(0) Reply
  • ওছমান ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ৫:২০ পিএম says : 0
    আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা হুক
    Total Reply(0) Reply
  • ওছমান ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ৫:২৭ পিএম says : 0
    আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হওয়া প্রয়োজন
    Total Reply(0) Reply
  • সবূজ মিআ ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ৮:১৮ পিএম says : 0
    বিসসের সবচেএ বর ইসলামি দেশ হচছে সৌদি আরব কিনতু সেই দেশের মুখে কোন পতিবাদের ভাসা নেই রূহিজ্ঞাদের জনন।
    Total Reply(0) Reply
  • apu ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৮:৪৯ এএম says : 0
    ট্রাম্প আসার পর সিরিয়ার যুদ্ধ থেমেছে, গন হত্যা বন্ধ হয়েছে, মিয়ানমার চাপে পরেছে ট্রাম্পের কারনেই । সে মুখে যাই বলুক মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী কাজ করে না ।
    Total Reply(0) Reply
  • arif ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৪:০৪ পিএম says : 0
    Miyanmar k sasti pete hobe.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ