Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যা দায় স্বীকার ভাগ্নের

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : বড় মামার অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে তার পরিবারের কাউকে হত্যার পরিকল্পনা। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দরকার অনেক টাকার। ওই টাকা জোগাড় করতে ছোট মামার বাসায় ডাকাতি। টাকা স্বর্ণালংকার লুট করতে গিয়ে খুন করা হয় মামীকে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদে নিজ বাসায় প্রবাসীর স্ত্রী পারভীন আক্তার খুনের দায় স্বীকার করে ভাগ্নে ইয়াছিন ও তার এক সহযোগী। গতকাল (বুধবার) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নওরীন আক্তার কাঁকনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এই হত্যাকা-ের বর্ণনাও দেয় তারা। তবে তাদের দাবি হত্যাকা- নয় তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বর্ণ ও টাকা লুট।
গত ৫ মার্চ রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদের জয়নব ভিলার তৃতীয় তলায় খুন হয় প্রবাসী নুরুল আলমের স্ত্রী পরভীন আক্তার। শিশু পুত্রের সামনে তাকে হত্যা করে মালামাল লুট করা হয়। এই ঘটনার তিন দিন পর ৭ মার্চ নুরুল আলম দেশে ফিরে অজ্ঞাতনামা তিন জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ এই ঘটনায় নিহত পারভীনের ভাসুর আব্দুর শুক্করের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্তের এক পর্যায়ে তাদের ভাগ্নে ইয়াছিনের উপর সন্দেহ হয় পুলিশের। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ মো. ইয়াছিন (২৭) ও ও তার সহযোগী মো. মনসুরকে (২৫) গ্রেফতার করে ডিবি। এছাড়া চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা এলাকায় একটি স্বর্ণ দোকান থেকে তাদের লুট করা বিভিন্ন স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার জানান, ইয়াছিন ছিল এই ঘটনার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’। ঘটনার সময় সে বাসার বাইরে থাকলেও তার সহযোগী মনসুর, ইছহাক ও রানা বাসায় প্রবেশ করে। জবানবন্দিতে ইয়াছিন বলেন, তার মা ও পারভীনের স্বামী নুরুল আলম সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন। নুরুল আলমের বড় ভাই আব্দুর শুক্কর রৌফাবাদ এলাকায় তাদের ভবন নির্মাণের সময় ইয়াছিনকে বাড়ি থেকে শহরে নিয়ে এসে প্রহরীর চাকরি দেয়।
টাইলস ফিটিংসের কাজ জানায় ইয়াছিন শুক্করকে ভবনে টাইলস বসানোর কাজ দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু শুক্কর কাজ না দিয়ে কয়েক বছর আগে তাকে দুবাই নিয়ে নিজেদের সবজির দোকানে কাজ দেয়। ইয়াছিনের দাবি ৭০০ দেরহাম বেতনে তাকে দুবাই কাজ দেওয়া হলেও ভিসার টাকা তুলতে তাকে কোনো বেতন পরিশোধ করেনি শুক্কুর। এ সময় সে শুক্করের দোকান থেকে গিয়ে অন্য মালিকের অধীনে কাজ নিলে তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে আসার আগে তাকে ১৭ দিন সে দেশের জেলে থাকতে হয়। এ সময় তার পরিচিতরা তাকে টাকা-পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেয় মামা শুক্কুর।
দেশে ফিরতে বাধ্য হয় ইয়াছিন। এরপর থেকে শুক্করের উপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে সে।
পরিকল্পনানুযায়ী ৫ মার্চ রাতে মনসুরসহ আর দুইজন পারভীনের বাসায় প্রবেশ করে এবং মামুন বাসার নিচে অবস্থান নেয়। জবানবন্দিতে ইয়াছিন আরও জানায়, টাকা রুটের সিদ্ধান্ত থাকলেও তাদের হত্যার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। সে তার বন্ধুদের ছুরি দেখিয়ে তার মামী পারভীনকে ভয় দেখানোর জন্য বলে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বলেন, মনসুর, রানা ও ইছহাক গিয়ে পারভীনকে ছুরি ধরে এ সময় সে চিৎকার করলে তারা তাকে বেঁধে রেখে ইছহাক তার পিঠের উপর বসে ও তার ছেলেকে বাথরুমে বেঁধে রাখে। এ সময় তারা নগর টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে চলে যায়। ইয়াছিন জানায়, বাসায় গিয়ে সে তার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে পারভীনের মারা যাওয়ার সংবাদ পায়। আর এর পরেই সে আত্মগোপনে চলে যায়। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে গতকাল সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যা দায় স্বীকার ভাগ্নের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ