Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পণ্যমূল্যে দুর্বিষহ জনজীবন

| প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও ভাটার টান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির কারণে খাদ্যঘাটতির সুত্র ধরে চালের অব্যহত মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রতিটি খাদ্যপণ্যে। চাল আমদানী শুল্ক প্রায় শুণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার সাথে সাথে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে জরুরী ভিত্তিতে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানী অব্যহত থাকলেও খুচরা বাজারে তার কোন প্রভাব দেখা যাচ্ছেনা। চাল ব্যবসায়ী ও মিলারদের সাথে সরকারের সংশ্লিষ্টরা বিশেষ জরুরী বৈঠক করে মূল্য কমানোর আশ্বাস দিলেও ভোক্তা পর্যায়ে সরকার এবং মিল মালিকদের সেই আশ্বাসের প্রভাব যেন পর্বতের মূষিক প্রসবের মত। মোটা ও সাধারণ মানের চালের মূল্য কিছুটা কমে এখনো ৫০ থেকে ৬৫ টাকায় স্থিতিশীল হয়ে আছে যা গত বছরের এ সময়ের চেয়ে শতকরা অন্তত ২৫ ভাগ বেশী। চালসহ প্রায় সব পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ১০ মাসে জীবনযাত্রার গড় ব্যয় ৭৬.৩৭ শতাংশ বেড়েছে বলে জানা যায়। গত মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ‘বাংলাদেশ নাগরিক সমাজ’র আহ্বায়ক এই তথ্য প্রকাশ করেন। এ সময়ে সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। খাদ্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং বিদ্যুত ও জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির কারণেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এমনভাবে বেড়েছে বলে তারা মনে করছেন।
মানুষ শুধু ভাত খেয়েই বাঁচেনা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক চাহিদার প্রতিটি ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক ব্যয়বৃদ্ধি ঘটেছে। এ সপ্তাহে কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ৮০ টাকা, পেঁয়াজের দাম ৫০-৬০ টাকা, ঢেড়শের দাম ৫০ টাকা, টমাটো ১২০ টাকা,শসা ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০-২৫০ টাকা। ভোজ্যতেল, চিনি, সব ধরনের মসলার দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার মান ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা বেড়ে যাচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে এটি একটি সাধারণ হিসাব। একদিকে মওসুমে ফসল ফলিয়ে কৃষকরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না অন্যদিকে ভোক্তারা তাদের চাহিদা পুরণে আয়ের সাথে সঙ্গতি রাখতে পারছেনা। কৃষক যে মূল্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছে, কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার হাতে পৌঁছতে তার মূল্য কয়েকগুন বেড়ে যাচ্ছে। অতিমুনাফাবাজিতে পকেট ভারী করছে মধ্যস্বত্বভোগিরা। পণ্যমূল্যের অযৌক্তিক উল্লম্ফণ ঠেকাতে সরকারের কোন নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। চাল-ডাল, চিনি, পেয়াঁজের মত নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি ও মুনাফাবাজির অভিযোগ উঠলেও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বাড়িয়ে শত শত কোটি টাকা মুনাফা করে থাকে বলে অভিযোগ আছে। যদিও এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে কখনো তদন্ত হয়না। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে যখন অব্যহতভাবে জ্বালানী তেলের মূল্য কমেছে তখন সরকার ধারাবাহিকভাবে গ্যাস, বিদ্যুত ও জ্বালানী তেলের দাম বাড়িয়েছে। জ্বালানী ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে পরিবহনখাতসহ প্রতিটি পণ্যের উপর।
দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান গতিহীন হয়ে পড়ায় বেকারত্বের বেড়ে চলেছে। স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ আয় রোজগারের সিংহভাগ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করতে গিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মত খাতগুলোতে নজর দিতে পারছেনা। ব্যয়বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনযাত্রা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। আমরা যখন আগামী দশকে একটি মধ্য আয়ের বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছি, তখন কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। এটি কোন দেশের টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষণ নয়। অশিক্ষা ও অপুষ্টির মাত্রা বাড়িয়ে দেশের অগ্রগতি অর্জন সম্ভব নয়। দেশে ধানের বাম্পার উৎপাদনের পরও কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিবছর ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। অকাল বন্যায় হাওরে ফসলহানির পর সেখানে জরুরী খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে গিয়ে দেখা গেল সরকারী খাদ্য গুদামগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য নেই। চাল আমদানী শুল্ক শতকরা ২৮ ভাগ কমিয়ে দেয়ার পরও খুচরা বাজারে তার কোন প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বিপণনব্যবস্থা বা বাজারের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। একশ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দুর্নীতি, কারসাজি ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে পণ্যমূল্যের যাঁতাকলে সাধারণ মানুষের জীবন ধারণ কঠিনতর হয়ে পড়ছে। এহেন বাস্তবতা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। পণ্যের মান, পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সম্ভাব্য সব কিছুই করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন