Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনীতিতে ঘোলাটে পরিবেশ কাম্য হতে পারে না

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিগত কয়েক মাসে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ঘোলাটে আকার ধারণ করেছে। একের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে। ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিতর্ক এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনার ঝড়, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী রাজনীতি, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা প্রচেষ্টার খবর, সর্বশেষ প্রধান বিচারপতির একমাসের ছুটিতে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সচেতন মহলে নানা ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কী হচ্ছে দেশে এবং এসব সমস্যার সমাধানই বা কি? নানা ধরনের কানাঘুষাও চলছে। পর্যবেক্ষক মহলে সংশয়, যে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ঘোলা পানিতে কেউ না আবার মাছ শিকার করে। এসব ইস্যু দেশের স্থিতিশীলতার জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয়। প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া নিয়ে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে তুমুল বিতর্ক চলছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এ কথাও বলা হয়েছে, তাঁকে ঘরবন্দি বা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাঁর সাথে দেখা করার জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছেন। তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবন গেলেও পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। অন্যদিকে ছুটিতে যাওয়া নিয়ে প্রধান বিচারপতির কোনো বক্তব্য নেই। তিনি নিশ্চুপ হয়ে আছেন। তবে তাকে নিয়ে সরকারি দল অনবরত কথা বলছে। বিষয়টি অনেকটা তার হয়ে কথা বলার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত এ তথ্য দেয়া হয়েছে। তার ছুটির দরখাস্ত প্রকাশ করা হয়েছে। দরখাস্তে তার স্বাক্ষর নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তার স্বাক্ষরের সাথে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ছুটির দরখাস্তের স্বাক্ষরের মিল নেই বলে ইতোমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের কথা ও ব্যাখ্যা দেয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সচেতন মহলে সন্দেহের উদ্রেক করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, প্রধান বিচারপতির রায়ের উপর ভর করে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চাইছে। কেউ বলছেন, বিএনপির দুরভিসন্ধি বানচাল হয়ে গেছে। তাদের এসব বক্তব্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, প্রধান বিচারপতির রায়ের উপর ভর করে বিএনপি কীভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়? এটা কি সম্ভব? এর ব্যাখ্যা ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। একটি রায়ের মাধ্যমে সংসদে না থাকা বিরোধী দল কীভাবে ক্ষমতায় যেতে পারে, তা সাধারণ মানুষের কাছে ধাঁধাঁ হয়ে আছে।
দুই.
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্ধ ও সংঘাতের প্রেক্ষিতে সুযোগ সন্ধানীদের দৃশ্যপটে আগমন নতুন ঘটনা নয়। যখনই রাজনৈতিক সমঝোতার অনুপস্থিতি ঘটেছে, তখনই রাজনীতির উপর দোষ চাপিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। এরশাদের ক্ষমতা দখল এবং ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ক্ষমতায় আসে মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অনৈক্য, সংঘাত ও মতবিরোধের সুযোগে। ক্ষমতা দখল করেই তারা দেশের রাজনৈতিক দল এবং তাদের ধারাকে দোষারোপ করে। রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করার জন্য দমন-পীড়ন, হামলা-মামলাসহ নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। ওয়ান-ইলেভেনের সময়তো মাইনাস টু ফর্মুলার মাধ্যমে দেশের প্রধান দুই নেত্রীকেই বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সৃষ্টি করা হয় সংস্কারপন্থী নামে দলের। সে সময় যদি তাদের ফর্মুলা কার্যকর হয়ে যেত, তবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করত। এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার সৃষ্টি হয় তখনই যখন জনসমর্থনহীন সরকার ক্ষমতায় থাকে। এ ধরনের সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার মূল মিশন হয়ে উঠে বিরোধীপক্ষকে দমন-পীড়ন করা। এই দমন প্রক্রিয়ায়ও সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না। তার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমন কিছু দেখলেই সে আঁৎকে উঠে। সাথে সাথে বিনাশ করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। এর কারণ হচ্ছে, সে নিজেও জানে, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের সমর্থন রয়েছে এমন শক্তি তার জন্য বড় হুমকি। ফলে আপত দৃষ্টিতে ক্ষমতাবান মনে হলেও নৈতিক বল না থাকায় ভেতরে ভেতরে সে ভয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে চেয়ারে বসতে পারে না। পা উঠিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে। ভয় তাড়ানোর জন্য গলা চড়িয়ে কথা বলে। অনেকটা অন্ধকারে পথ চলা পথিকের মতো, যে ভয় তাড়ানোর জন্য জোরে কাশি দেয় কিংবা গান ধরে। তার পথ চলা হয় আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। অদৃশ্য কোনো কিছু এসে তাকে জড়িয়ে ধরল কিনা, এমন আতঙ্ক তার মধ্যে বিরাজ করে। পায়ে দড়ি প্যাচালেও মনে করে সাপ প্যাচিয়ে ধরেছে। অন্যদিকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তি বা দলের কাছে ক্ষমতাটা দিনের আলোর মতোই। অন্ধকারের ভয় তাকে পেয়ে বসে না, ঝেড়েও কাশতে হয় না, অহেতুক গান গাইতে হয় না। নৈতিক শক্তি বলে সে অন্ধকার দূর করে। এই যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে নার্ভাসনেস, এটা সৃষ্টি হয়েছে সরকারের নৈতিক শক্তি না থাকার কারণে। ক্ষমতাসীন দল যদি বিনাভোটে ১৫৩টি আসনে নির্বাচিত না হয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতো, তবে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কিছু থাকত না। কে ক্ষমতায় যেতে চায় বা ষড়যন্ত্র করছে, এ নিয়ে অনুমাণনির্ভর ও অসার কথাবার্তার প্রয়োজন পড়ত না। আবার প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে ব্যাপক বির্তক এবং অনাহুত রাজনীতিরও সৃষ্টি হতো না। ছুটি নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা নিমেষেই শেষ করে দেয়া যেত যদি প্রধান বিচারপতি নিজে সরাসরি কথা বলতেন। তার পরিবর্তে আমরা দেখেছি, ছুটির ব্যাপারটি নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলসহ মন্ত্রীদের কথা বলতে। প্রধান বিচারপতি ঘরবন্দি কিনা বা তিনি কোথায় আছেন, তা দেখানোর জন্য তাকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যেতে দেয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকারের নানামুখী তৎপরতায় একজন সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরও মনে হওয়া স্বাভাবিক, সরকার হয়তো কিছু লুকাতে চাচ্ছে। লুকাতে গিয়েই ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত প্রধান বিচারপতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিডিয়ার সামনে কথা-বার্তা বলেন। ছুটির বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়ার পর তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অথচ এক বক্তব্যেই তিনি এ বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারতেন। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কেন বিষয়টি পরিস্কার করছেন না? তার কথা বলতে অসুবিধা কোথায়? তিনি কি কোনো ধরনের বক্তব্য দেয়া থেকে বিধি-নিষেধের মধ্যে আছেন?
তিন.
আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে কিনা, এ প্রশ্নও এখন কেউ কেউ তুলছেন। বিএনপির অনেক নেতাকে এমন শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অন্যতম বৃহৎ এই দলের পক্ষ থেকে যখন এ ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করা হয়, তখন জনসাধারণের মনেও নানা সংশয়ের সৃষ্টি হয়। বিএনপির কোনো কোনো নেতার এমন শঙ্কা প্রকাশের কারণ দুটি হতে পারে। এক. তারা হয়তো মনে করছেন, সরকার বিএনপিকে বাদ দিয়েই আগামী নির্বাচন করবে। দুই. সহায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচন হতে দেবে না। এই হতে দেবে না কীভাবে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আবার তারা এ কথাও বলছেন, সরকারের পক্ষে আরেকটি ৫ জানুয়ারী মার্কা এক তরফা নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কেন সম্ভব হবে না, তারও স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। একটি সরল হিসাব হতে পারে, বিএনপি ও তার জোট ৫ জানুয়ারীর মতো নির্বাচন প্রতিরোধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে ঠেকানোর ব্যবস্থা করবে। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তবে বিএনপি কি করবে? ইতোমধ্যে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলে দেয়া হয়েছে, বিএনপির সাথে কোনো ধরনের সমঝোতা হবে না। আপাত দৃষ্টিতে এরপর আর কোনো কথা থাকে না। এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রতীয়মাণ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ। প্রয়োজনে বিএনপিকে বাদ দিয়ে ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করবে। এখানেও প্রশ্ন আসে, সরকারের পক্ষে কি বিএনপিকে বাদ দিয়ে আরেকটি নির্বাচন করা সম্ভব? বিএনপি যদি আবারও একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে আন্দোলন শুরু করে, তবে তার ধাক্কা কি সরকার বা দেশের পক্ষে পুনরায় সামলানো সহজ হবে? ৫ জানুয়ারীর আন্দোলনে সরকার টিকে গেলেও দেশের অর্থনীতি ও জানমালের যে ক্ষতি হয়েছে, তার রেশ তো আজও রয়ে গেছে। শুধু আন্দোলনের রেশ নয়, নির্বাচনটি বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তাদের সহযোগিতাও কমে গেছে। অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া একটি খারাপ নির্বাচনের নজিরও স্থাপিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল কি এমন আরেকটি খারাপ নজির সৃষ্টি করতে চাইবে? যদি না চায়, তবে যতই অপছন্দ হোক এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও বিএনপির সাথে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে দলটির উপর স্টিম রোলার চালিয়েও শেষ করা যায়নি। ভোটের হিসাবেও দলটি ক্ষমতাসীন দলের প্রায় সমান সমান। এ বাস্তবতা অস্বীকার কারার উপায় নেই। কাজেই শত চেষ্টা করেও যাকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি এবং যার অবস্থানও শক্ত, তাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সাধারণভাবে একটা কথাও আছে, যদি তোমার শত্রæকে শেষ বা নিশ্চিহ্ন করতে না পারো, তবে তাকে কনভিন্স করে সাথে নিয়েই পথ চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিএনপিকে যেহেতু শেষ করা যায়নি, তাই তাকে কনভিন্স করা ছাড়া সহজ কোনো পথ নেই। তা না করে যদি ৫ জানুয়ারিরর মতো আরেকটি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয়, তবে তা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া বিগত প্রায় ৫ বছরে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটও পরিবর্তিত হয়েছে। সরকারের একমাত্র সমর্থক যে ভারত, তার অবস্থানও আগের মতো নেই। সেও চাচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। তার আচরণে মনে হচ্ছে, ৫ জানুয়ারির মতো সরাসরি হস্তক্ষেপ করে আরেকটি নির্বাচন করিয়ে দেয়ার মতো অপরিপক্ক কাজ দ্বিতীয়বার সে করতে যাবে না। গত সোমবার বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে এক বৈঠকে বলেছেন, বিজেপি প্রত্যাশা করে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। এর আগে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও বাংলাদেশ সফর করে অনুরূপ কথা বলেন। তাদের এ বক্তব্য থেকে প্রতীয়মাণ হয়, আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের সময়ের মতো নেই। এ প্রেক্ষিতে দেশের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা পূর্বানুমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই আনপ্রেডিক্টেবল পরিস্থিতিতে নানা ধরণের গুঞ্জণ ও গুজব ডালপালা ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় গুঞ্জণটি হচ্ছে, নির্বাচন না হওয়া নিয়ে। অনেকে বলছেন, যদি রাজনৈতিক সমঝোতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি না হয় বা রাজনৈতিক দলগুলো তা করতে ব্যর্থ হয়, তবে ফের সুযোগ সন্ধানীদের আর্বিভাব হতে পারে। যদি তাই হয়, তবে তা দেশের স্বাভাবিক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ধারার জন্য খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
চার.
আপাত দৃষ্টিতে দেশের সার্বিক রাজনীতি অত্যন্ত শান্ত ও স্থিতিশীল মনে হলেও, এটাই প্রকৃত চিত্র নয়। এ পরিস্থিতি অনেকটা ঝড় আসার পূর্বে থমথমে অবস্থার মতো। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও ভেতরে ভেতরে যে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে, তা আঁচ করা যায়। নানা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে যে এক ধরনের অস্বস্তি ও অস্থিরতা রয়েছে, তা বিভিন্ন ঘটনায় বিপাকে পড়া থেকে অনুমান করা যায়। এদিক থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মাঠ পর্যায়ে কোনো ধরনের কর্মসূচি না থাকলেও দলটি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। প্রেস কনফারেন্স করে বক্তব্য-বিবৃতির ঝড় তোলা ছাড়া তার আর তেমন কাজ নেই। তার এই বক্তব্য-বিবৃতিও ক্ষমতাসীন দলের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এর পাল্টা জবাব দিতে হচ্ছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিএনপিকে যতই উপেক্ষা ও পাত্তা না দেয়া হোক না কেন, তার কথা ফেলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ একটাই, তার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। তার বক্তব্য দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে। এটাও বোঝা যায়, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ, এ দল দিয়ে কিছু হবে না-এতসব অপবাদ সত্তে¡ও দলটি নীরবে গুছিয়ে উঠছে। বিএনপির এই ইতিবাচক পরিস্থিতি অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সমস্যাও বিএনপির অনুকূলে যাচ্ছে। বিএনপিকে দিয়ে কিছু হবে না, হতাশ হওয়া সাধারণ মানুষের এ মনোভাবের বিপরীতে দলটির অবস্থান ধীরে ধীরে সুসংহত হওয়া তার জন্য ভাগ্যই বলতে হবে। এর বিপরীতে ক্ষমতাসীন দল দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজনীতি করছে। ক্ষমতার বাইরে তার রাজনৈতিক শক্তি কতটা অটুট রয়েছে, তা বলা মুশকিল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে রাজনৈতিক শক্তি ক্ষয় হওয়া স্বাভাবিক। পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, ক্ষমতা থেকে চলে গেলে দলটির রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। এখন ক্ষমতায় থাকায় এ বিষয়টি টের পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষমতায় মোহগ্রস্ত হয়েই প্রতিপক্ষের কাউকে আমলে নিচ্ছে না। তুচ্ছজ্ঞান করা থেকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক বৈরিতা বৃদ্ধি করে চলেছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এ বৈরিতা বৃদ্ধি পাবে। শঙ্কার বিষয়টি এখানেই।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনীতি

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ