Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে : সু চি

| প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে বার্মা (মিয়ানমার) কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। বুধবার ব্রিটিশ সংসদ হাউস অব কমন্সে এক প্রশ্নের জবাবে থেরেসা মে একথা জানান। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির কলচেস্টারের এমপি উইল কুইন্স-এর প্রশ্ন করেছিলেন, কোন ধরনের চাপ রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন বন্ধ ও তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার জন্য মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে পারে।
এই প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যা ঘটছে তাতে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। আমরা জানি বাংলাদেশে ৫ লাখের বেশি শরণার্থী রয়েছে। এই পরিস্থিতি বড় ধরনের মানবিক সঙ্কট।
রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার কথা তুলে ধরে থেরেসা মে বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও ত্রাণ সংস্থার মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করছি। আমরা বার্মায় রেডক্রসকে অর্থ দিয়েছি। বাংলাদেশে যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা করছি।
রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন বন্ধে যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপ তুলে ধরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আমরা বিষয়টি তিনবার উত্থাপন করেছি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে বার্মা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সহিংসতা বন্ধ, শরণার্থীদের নিরাপদে ফিরে আসার সুযোগ দিতে এবং ত্রাণকর্মীদের পূর্ণাঙ্গ যাতায়াতের অনুমোদন দিতে হবে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটে উদ্বেগের কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা যুক্তরাজ্য বাতিল করেছে বলেও উল্লেখ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিটিশ এমপি কুইন্স স¤প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতিকে তিনি মানবিকতার বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২৫ আগস্ট রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ লাখ বিশ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। মাঝখানে কয়েকদিন রোহিঙ্গাদের ঢল কিছু মাত্রায় কমে আসলেও চলতি সপ্তাহে তা আবার বেড়েছে। সোমবার বাংলাদেশে প্রায় এগারো হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকে জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে : সু চি
এদিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বলেছেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া ‘মানুষদের’ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুই বার এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সফল অতীতের উপর ভিত্তি করে আমরা তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছি। বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এ ভাষণেও সু চি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলে আখ্যায়িত করেননি। এ জনগোষ্ঠীর মানুষদের ওপর মিয়ানমার সরকার ‘জাতিগত নিধন’ চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘ যে অভিযোগ করেছে সে বিষয়েও তিনি কিছু উল্লেখ করেননি। এমনকি রাখাইনে সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ব্যাপারেও তিনি কোনও কথা বলেননি।
বৃহস্পতিবার দেওয়া ভাষণে সু চি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন রাখাইন ইস্যুতে বিশ্বের মনোযোগ ছিল ব্যাপক। গত বছর অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে যার শুরু। চলতি বছর আগস্টে আবারও একই ধরনের হামলা ঘটেছে। এই হামলার পর থেকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সমস্যার জন্ম হয়েছে। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মত বুঝতে হবে। যদিও, কারও পক্ষেই আমাদের দেশের পরিস্থিতি বুঝতে পারা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের শান্তি ও উন্নয়ন আমাদের চেয়ে কেউ বেশি চাইতে পারে না। তাই এ সব সমস্যা আমাদের একতার শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।’
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের এ নেত্রী বলেন, আপনারা সবাই জানেন রাখাইন ইস্যুতে বিশ্বের বিশাল মনোযোগ ছিল। গত বছর অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে যার শুরু। চলতি বছর আগস্টে আবারও একই ধরনের হামলা ঘটেছে। এই হামলার পর থেকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সমস্যার জন্ম হয়েছে। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মত বুঝতে হবে। যদিও, কারও পক্ষেই আমাদের দেশের পরিস্থিতি বুঝতে পারা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের শান্তি ও উন্নয়ন আমাদের চেয়ে কেউ বেশি চাইতে পারে না। তাই এ সব সমস্যা আমাদের একতার শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
সু চি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দেশের উচিত যা করা প্রয়োজন তা চালিয়ে যাওয়া। অধিকন্তু তা করতে হবে সঠিক, সাহসিকতা ও কার্যকরভাবে। উন্নতি ও সফলতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করে যাব। সমালোচনা ও অভিযোগের জবাব কথায় না দিয়ে আমাদের পদক্ষেপ ও কাজ দিয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে দেব।’
রাখাইনে করণীয় বিষয়ে সু চি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে আমাদের অনেক কিছুই করতে হবে। আমরা যদি করণীয় বিষয়গুলোর তালিকা করি ও অগ্রাধিকার ঠিক করি তাহলে তিনটি প্রধান করণীয় সামনে আসে। সেগুলো হলো-
প্রথমত, বাংলাদেশে যারা চলে গিয়েছে তাদের প্রত্যাবাসন ও কার্যকরভাবে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া, দ্বিতীয়ত, পুনরায় স্থানান্তর ও পুনর্বাসন এবং তৃতীয়ত, অঞ্চলটির উন্নয়ন ও স্থিতিশীল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’
সু চি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা মানুষদের পুনর্বাসন নিয়ে শুধু আমাদের কাজ করলে হবে না। রাখাইনের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ রাখাইন ও হিন্দুদের জন্যও কাজ করতে হবে। তারা যাতে স্বাভাবিক হয় তা আমরা নিশ্চিত করব। তাদের জীবন উন্নত করতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই কর্মসূচি গ্রহণ করব। অঞ্চলটির উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আসন্ন দিনগুলোতে সংঘর্ষ এড়াতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করব।’
প্রতিটি কর্মসূচির জন্যই আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের উদ্যোক্তা, এনজিও, নাগরিক সংগঠন ও জনগণ এ কাজে অংশগ্রহণ এবং এতে সাহায্য করার কথা বলছেন। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ও সমন্বয় ও সহযোগিতার কথা বলেছে। এটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য বা আঞ্চলিক সরকারগুলোকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে হবে। আমরা দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সহযোগিতার আন্তরিকতাপূর্ণ প্রস্তাব পেয়েছি। এসব প্রস্তাবের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য, সবগুলো খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য, আমাদের একটি প্রক্রিয়া প্রয়োজন যা কেন্দ্রীয় সরকার, জনগণ, বেসরকারি খাত, স্থানীয় এনজিও এবং নাগরিক সমাজ, বন্ধু দেশ, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি অনুমোদন করবে। আমরা এই প্রক্রিয়াটিকে ‘মানবিক সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ, রাখাইনের পুনর্বাসন ও উন্নয়ন’ বলবো।
সব ক্ষেত্র এবং সমাজের সব স্তরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সব সংস্থার প্রবেশাধিকারের লক্ষ্যে কাজ করার জন্যই এই প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার বিষয়ে দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর ১৯ সেপ্টেম্বর ভাষণ দিয়েছিলেন সু চি। ওই ভাষণে ৩০টি পুলিশ চেকপোস্ট আর একটি রেজিমেন্টাল হেড কোয়ার্টারে সন্ত্রাসী হামলার জন্য রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি এবং এর সমর্থকদের দায়ী করে আইনের আওতায় নেওয়ার হুমকি দেন। সেই বক্তব্যের সমালোচনায় অ্যামনেস্টি বলেছিল, বালুতে মুখ গুঁজে আছেন তিনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার বিরুদ্ধে এনেছিল সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন আড়ালের অভিযোগ।
১৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া ভাষণে সু চি দাবি করেছিলেন, রাখাইনে সেনা অভিযান শেষ হয়ে গেছে। সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কিছু বলেননি। শুধু জানিয়েছিলেন, কেন বাংলাদেশে মুসলমানরা পালিয়ে যাচ্ছে তা অনুসন্ধান করতে হবে। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ